বিশ্বাসঘাতক নোবেলজয়ী !
সু চির মুখোশ উন্মোচনের দাবি ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিষয়ে নীরব থেকে অং সান সু চি নোবেল শান্তি পুরস্কারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী বেশ কয়েকজন নারী। ৮ সেপ্টেম্বর নোবেল বিজয়ী নারীরা এক চিঠিতে সু চিকে লিখেছেন- যাদের কেউ নেই তাদের রক্ষায় আপনার সোচ্চার হওয়ার জন্য আর কত রোহিঙ্গাকে মরতে হবে, আর কত রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণের শিকার হতে হবে, আর কত সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন হতে হবে? চিঠিতে আরো লেখা হয়েছে- আজ আপনার নীরবতা নোবেল শান্তি পুরস্কার ও এর মর্যাদায় একটি কালো ও বিব্রতকর ছায়া ফেলেছে, যে মর্যাদাকে রক্ষা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিঠিতে লিখেছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন নাগরিক জোডি উইলিয়াম, ইরানের শিরিন এবাদি, লাইবেরিয়ার লেইমাহ বোয়ি এবং আরো চার নোবেল বিজয়ী নারী। এর কিছুদিন আগে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানের নাগরিক মালালা ইউসুফ জাই এক টুইটার বার্তায় রাখাইন পরিস্থিতিকে হৃদয়বিদারক এবং নিন্দনীয় উল্লেখ করে সু চিকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর তাগিদ দিয়েছিলেন। মালালা আরো বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমি বারবার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অমানবিক ও নিন্দনীয় ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে আসছি। সু চির কাছেও আমি একই ভূমিকা প্রত্যাশা করি। বিশ্ব তার যথাযথ পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছে, অপেক্ষায় আছে রোহিঙ্গা মুসলিমরাও।’
দুঃখের বিষয় হলো, সু চি কাক্সিক্ষত ও সঙ্গত ভূমিকা পালন করেননি। বরং তিনি যেন একটি মুখোশ পরে আছেন। তার আচার-আচরণ বিশ্লেষণ করলে মুখোশ পরার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কানাডার দৈনিক দ্য স্টার এক খবরে জানিয়েছে- চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় জোডি উইলিয়ামস, শিরিন এবাদি ও লেইমাহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অটোয়াভিত্তিক নোবেল উইমেনস ইনিশিয়েটিভ-এর পরিচালক রেচেল ভিনসেন্টও। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির বক্তব্যে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ভিনসেন্ট। শুধু তিনিই নন, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অন্য নারী নোবেল বিজয়ীরাও হতাশ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ভিনসেন্ট আরো বলেন, আমাদের মনে হয়েছিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে সোচ্চার হওয়া সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু বৈঠকের পর মনে হয়েছে, আমাদের উদ্বেগ জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজনীয়।
প্রসঙ্গত ভিনসেন্ট বলেন, মিয়ানমারে যখন সু চি গৃহবন্দী ছিলেন তখন নোবেল বিজয়ী নারীরা তার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। সামরিক সরকারের অনুমতি নিয়ে মিয়ানমারে গিয়ে দেখা পর্যন্ত করেছিলেন জোডি উইলিয়ামস। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, যখন বিশ্বের মানুষকে তাদের স্বাধীনতাকে সু চি ও কারাবন্দী গণতান্ত্রিক নেতাদের মুক্তির জন্য কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন তখন সু চি একটি অলিখিত প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন। বিশ্ব-সম্প্রদায়ের যারা তাকে সমর্থন করেছিলেন, এই আচরণ তাদের প্রতি চপেটাঘাতের মতো। আসলে সু চির আচরণে তার মুখোশ বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে হয়তো চেঞ্জ ডট আরজি নামের ওয়েব সাইটে সু চির শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার লোক একটি অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া সু চির কানাডার নাগরিকত্ব বাতিলের আহবান জানিয়েও একটি আবেদন করা হয়েছে। এমন আবেদনকে আমরা সঙ্গত বলেই মনে করি। কারণ যে মানুষ নিজ দেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব হরণ করে তাদেরকে হত্যা ও ধর্ষণের পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয় তার অন্য দেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পাওয়ার কোন অধিকার থাকে না। বিষয়টি সু চি আদৌ উপলব্ধি করেন কিনা তা আমরা জানি না।