সিলেটে বসছে এনআরবি গ্লোবাল কনভেনশন: খুলতে যাচ্ছে বিনিয়োগ সম্ভাবনার নতুন এক দ্বার

nrbআব্দুল মুকিত অপি/এনাম চৌধুরী: সিলেটে অনুষ্ঠেয় এনআর বি গ্লোবাল কনভেনশন নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র। প্রায় ১০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণ নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার প্রত্যয় নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন আয়োজকরা। তাদের প্রত্যাশা, এই কনভেনশন খুলে দেবে দেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনার এক দ্বার। অক্টোবরের ২১ থেকে ২৭ তারিখ সপ্তাহব্যাপী আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আয়োজিত এই কনভেনশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে আশাবাদী আয়োজক মহল। এছাড়া অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ কনভেনশনে উপস্থিত থাকবেন।
সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজসহ অন্যান্য সচেতন মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন কী চমক নিয়ে আসছেন আয়োজকরা। বিশেষ করে যারা বৃটেনের কারী শিল্পের অস্কারখ্যাত বৃটিশ কারী এওয়ার্ড সম্পর্কে জানেন বা অনুষ্ঠান দেখেছেন তারা এনাম আলী ম্যাজিক দেখার প্রতীক্ষায় আছেন বলা যায়!
বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এই কনভেনশনের মূল আয়োজক। সহযোগিতায় আছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এ পর্যন্ত ১৯টি দেশে বসবাসরত বাঙালি ব্যবসায়ীরা কনভেনশনে যোগ দেওয়া নিশ্চিত করেছেন। এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদী আয়োজকরা।
গত ৯ আগস্ট সিলেট চেম্বার ভবনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে কনভেনশনের লগো উন্মোচন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে বাংলাদেশমুখি করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই কনভেনশন একটি যোগসূত্র রচনা করে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে যোগাযোগের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’ তিনি বলেন,‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা মানে নিজ দেশকে সম্মান করা। শেকড় যেখানে গাঁথা সেখানে আমাদের ফিরে আসতেই হবে।’
বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি এনাম আলী এমবিই বলেন, ‘আমরা প্রবাসীরা সবক্ষেত্রেই চ্যাম্পিয়ন। আমরা প্রবাসে বসে বাংলায় কথা বলি, বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষে কাজ করি। আমাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। দেশি ও প্রবাসীদের মধ্যে জানাশোনা, আত্মিক পরিচয়ের লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে আমি এই কনভেনশনের কথা চিন্তা করি। আমার সেই চিন্তা আজ সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে বলে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
nrbglobalএনাম আলী এমবিই বলেন, আমরা আমাদের জন্মমাঠি ছেড়ে থাকলেও  আমাদের সব স্বপ্ন আমাদের ভালো লাগা আমাদের ঐ দেশকে নিয়ে। আমরা প্রবাসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি অথচ দেশে আসলে আমাদের বলা হয় ‘প্রবাসী’, আর সেখানে আমাদের বলা হয় অভিবাসী। প্রশ্ন হলো -আমরা যদি দেশের উন্নতির জন্য আমাদের শ্রম, মেধা , কষ্টের অর্জনকে এই দেশকে দিয়ে থাকি তা হলে দেশ আমাদের কেন প্রাপ্য মর্যাদা টুকু দেবে না? তিনি বলেন – আমরা পৃথিবীর যে দেশেই বসবাস করি না কেন আমরা সেই দেশের আইন , নিয়ম-কানুন মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য করি থাকি। পাশাপাশি দেশে আসলে এখানকার সব নিয়ম মেনেই আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করি সে হিসেবে আমাদের পাওনা অবশ্যই অনেক বেশি ই কিন্তু আমরা কি সেটুকু আদৌ পাচ্ছি ? এনাম আলী বলেন , এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন এর মাধ্যমে আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে চাই , আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর এই দেশকে পরিচিত করতে চাই। তাদেরকে বাংলাদেশে কিছু করতে আগ্রহী করি তুলতে চাই।
এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন সিলেটে আয়োজন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স প্রেসিডেন্ট বলেন,সিলেটে এনআরবি ক্যাপিটাল , সিলেটের মানুষ সমগ্র বাংলাদেশকে বিশ্বময় পরিচিত করেছেন তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ‘গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন’ সিলেটে আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের পরবতী প্রোগ্রাম চট্টগ্রামে অনুষ্টিত হবে আসা করছি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের এক উর্বর ক্ষেত্র। এই সুযোগকে প্রবাসীদের কাজে লাগানো উচিত। সরকার প্রবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে সদা প্রস্তুত আছে। এ নিয়ে বিতর্ক বা ভয়ভীতির কোন সুযোগ নেই।’
কনভেনশনে থাকছে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং এ উপলক্ষে সুরমা নদীতে হবে বিশেষ নৌকাবাইচ। আরো অনেক চমক থাকবে, যা এখনি প্রকাশ করতে রাজী নয় আয়োজকরা। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণকারীরা আলাদা এক ভুবনে সময় কাটাবেন এমনটা বিশ্বাস করেন তারা।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ কনভেনশন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুবিধা জানানো। শিল্প কারখানা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে দেশে এখন বিনিয়োগের সুবর্ণ সময়। এছাড়া পর্যটন, পাওয়ার প্লান্ট, আইটি খাতে সম্ভাবনা ব্যাপক। কোম্পানীগঞ্জে আইটি পার্ক হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছন্দে-নিরাপদে এখানে আসতে পারেন।’ খন্দকার সিপার জানান, ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ইনডোর স্টেডিয়ামে দেশের ব্যাংক, বীমাসহ অন্যান্য কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব স্টল বসাবে। এতে করে প্রবাসীরা সহজেই বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারবে।
দেশের বিখ্যাত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান দিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্স অপরূপ সাজে সজ্জিত করা হবে। এসব কাজ এনাম আলী খুব যতœ নিয়ে তদারক করছেন বলে জানান খন্দকার সিপার।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ফাইন্যান্স ডিরেক্টর ব্রিটেনের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী মনির আহমেদ বলেন , বাংলাদেশের মানুষ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন। যাদের কষ্ঠের অর্জন আজকের অর্থনীতির সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অথচ আমাদের দেশে আমাদের পরিচয় আমরা প্রবাসী।
তিনি বলেন এতো শ্রম, এতো কষ্ঠ করে আমরা কি এই পরিচয় বহন করবো ? তিনি বলেন, আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দেশমুখী করতে চাই এবং তাদরেকে যেন শুনতে না হয় তারা প্রবাসী সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন আমাদের আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যদি দেশমুখী করতে হলে অবশ্যই তাদের সম্মান জানাতে হবে এবং সেটা যদি সরকারী ভাবে করা না হয় , সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা না হয় তা হলে আমাদের অনেক কিছু হারাতে হবে।
মনির আহমেদ আশা করেন, এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সেঁতু বন্ধন তৈরী হবে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সিলেট সফরে এসে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ বিষয়ক বাণিজ্যদূত রোশনারা আলী এমপি জানান, বাংলাদেশে বৃটিশ সরকারের বিনিয়োগ বাড়ছে। তার এ কথায় আশ্বস্থ সবশ্রেণীর মানুষ। দু’দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন দিনে দিনে আরো বাড়বে বলে সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির এই কনভেনশনকে মহামিলন উল্লেখ করে বলেন, ‘সিলেটে প্রথমবারের মতো এনআরবি কনভেশন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে একদিকে ঘটবে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের মহামিলন, অন্যদিকে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়বে।’ সিলেট প্রেসক্লাবকে এনআরবি কনভেনশনে সহযোগিতার দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে এই মহামিলনের খবর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশনকে খুবই ভালো ও শুভ উদ্যোগ বলে উল্লেখ করলেন সিলেট চেম্বারের বর্তমান পরিচালক এবং এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক হিজকিল গুলজার। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত এই কনভেনশনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে আমার বিশ্বাস। কনভেনশনে শুধু সিলেটের নয়, দেশের বিভিন্ন জেলার প্রবাসীরা অংশ নেবেন। এতে করে সবার মধ্যে একটা সুসম্পর্ক গড়ে ওঠবে, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ আগামীতে এই কনভেনশন দেশের অন্যান্য জেলায়ও হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রাকৃতিক দিক দিয়ে সিলেট একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এখানকার পাথর-বালু-চুনাপাথর-গ্যাস-চা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। বর্তমানে পোষাক, ঔষধ, সিরামিক সহ নানা ধরনের শিল্প কারখানা বৃহত্তর সিলেটে উল্লেখযোগ্য হারে গড়ে ওঠেছে।
জাফলং-মাধবকুন্ড, হাকালুকি-টাঙ্গুয়া, রাতারগুল, বিছনাকান্দি মেলে দিয়েছে পর্যটনের অবারিত বাতায়ন। গ্রান্ড সুলতান, দ্যা প্যালেস, দোসাই রিসোর্টগুলো দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই কনভেনশন সবার জন্যই বড় এক সুযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছে।
তরুণ উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম শফিক তার উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়ে বললেন, ‘এ-তো আমাদের জন্য পরম পাওয়া। বিভিন্ন দেশের নতুন-পুরনো উদ্যোক্তাদের এক সঙ্গে পাওয়া সহজ নয়। এ কনভেনশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন এক পথ উন্মোচিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
কনভেনশনে অংশগ্রহণের জন্য প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন কাজ চলছে। সিলেট চেম্বারে আগামী ১ অক্টোবর থেকে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হবে। এছাড়া কনভেনশন চলাকালীন গেটের বাইরেও রেজিষ্ট্রেশন বুথ থাকবে বলে জানান আয়োজকরা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button