সু চির সঙ্গে সাক্ষাতে কঠোর বার্তা ব্রিটিশ মন্ত্রীর

markঅং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাত করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা পৌঁছে দিলেন ব্রিটেনের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড।
তিনি গতকাল রাখাইন রাজ্য সফর শেষে সু চির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ সময় তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাখাইনে আমরা গত কয়েক সপ্তাহে যা দেখেছি তা কঠোরতম ও অগ্রহণযোগ্য এক ট্রাজেডি। এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। যারা বাড়িছাড়া হয়েছে, দেশ ছাড়া হয়েছে তাদেরকে দ্রুততম সময়ে এবং নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরতে দিতে হবে।
সাক্ষাত শেষে মার্ক ফিল্ড বলেছেন, অং সান সু চি ও অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাতে আমি সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বান মেনে নেয়ার ওপর খুব বেশি জোর দিয়েছি। বলেছি, রাখাইনে ওইসব মানুষের কাছে মানবিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার অনুমতি দিতে হবে।
ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে গতকাল রাতে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, অং সান সু চিকে সাক্ষাতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে আর্জেন্ট ভিত্তিতে তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানান।
রাখাইনে গত ২৫ শে আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর প্রথম কোনো বিদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করলেন। ওই সহিংসতায় প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। রাখাইন রাজ্য সফর শেষে তিনি রাজধানী ন্যাপিড’তে সু চির সঙ্গে ওই সাক্ষাত হয় তার।
রাখাইন রাজ্য সফরের সময় তিনি সেখানে বাস্তুচ্যুত মানুষদের দেখতে পেয়েছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় এসব মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এসব প্রত্যক্ষ করে মার্ক ফিল্ড সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। সব সম্প্রদায়কে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানান। সরকারের কাছে আহ্বান জানান আক্রান্ত এলাকায় সহায়তা পৌঁছে দেয়ার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন এডভাইজরি কমিশন (এআরসি) যেসব সুপারিশ করেছে তাদের রিপোর্টে তা বাস্তবায়নে ব্রিটেনের আহ্বানকে আবারো তিনি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। বলা হয়, এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যেখানে মুসলিম, বৌদ্ধ ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরা শান্তিতে ও স্থিতিশীলতায় একে অন্যের পাশাপাশি বসবাস করতে পারেন। রাখাইন সফরের সময় রাখাইনের মুখ্যমন্ত্রী নই পু, রাজ্যের নির্বাহী সচিব ইউ টিন মং শয়ে, রাখাইন ভিত্তিক জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন তিনি।
মার্ক ফিল্ড এ সময় রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য স্থাপিত শিবির পরিদর্শন করেন। এসব মানুষ মিয়ানমারের ভিতরে রয়ে গেছেন। গত সপ্তাহে মার্ক ফিল্ড ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রাখাইন ইস্যু তুলে ধরে তাতে আলোচনা করেন। মার্ক ফিল্ড বলেন, আমি রাখাইনে কিছু সম্প্রদায়ের মানুষকে দেখেছি। তারা খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কয়েক বছরে মিয়ানমার বেশ অগ্রগতি করেছে। কিন্তু রাখাইনে চলমান সহিংসতা ও মানবিক সঙ্কট সেই অগ্রগতিকে পথচ্যুত করছে।
আজ বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও সাহায্য বিষয়ক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে মার্ক ফিল্ড ও এফসিও-ডিএফআইডি জয়েন্ট মিনিস্টার অ্যালিস্টার বার্টের। এ আলোচনায় কিভাবে শরণার্থীদের জীবন রক্ষায় উত্তম ব্যবস্থা নেয়া যায় তা উঠে আসতে পারে। আক্রান্ত যারা বাংলাদেশে এসেছেন এবং মিয়ানমারে রয়েছেন তাদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা হিসেবে ৩ কোটি পাউন্ড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন। এ অর্থের বেশির ভাগই খরচ করা হবে বাংলাদেশে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button