ক্যান্সার প্রতিরোধক সবুজ চা
ডা. আবু আহনাফ: বিশ্বে পানির পরে যে পানীয়টি জনপ্রিয়, তা হলো চা। মেডিসিন্যাল পানীয় বা আরোগ্যকর পানীয় হিসেবেও এর পরিচিতি হয়েছে। চা একটি গুল্মজাতীয় গাছের পাতা থেকে তৈরি হয়, যার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিজ। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯ সালে চীনে এর আবিষ্কার ও ১৭২০ সাল থেকে এর জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যায়। চীন থেকে জাপান হয়ে এশিয়ায় এর বিস্তৃতি ঘটে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চা একটি জনপ্রিয় পানীয়। প্রায় ৩০টি দেশে চা উৎপন্ন হয়। চায়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে- (ক) পলিফেনল, (খ) অ্যামাইনো এসিড, (গ) ক্যাফেইন ও (থ) থিয়ফ্লাভিন। এ ছাড়া সবুজ চা-পাতায় রয়েছে হাজারো রকমের উপাদান, যা প্রক্রিয়াজাত করার সময় ভেঙে যায়।
সবুজ চা-পাতা থেকে ছয় ধরনের চা পাওয়া যায়। যেমন- (১) সাদা চা, (২) হলুদ চা, (৩) সবুজ চা, (৪) উলং চা, (৫) কালো চা ও (৬) পোস্ট ফারমেন্টেড বা প্রক্রিয়াজাত চা। তবে বাজারে সাদা, সবুজ, উলং ও কালো চা বেশ জনপ্রিয়। তবে স্বাস্থ্যকর চা হিসেবে সবুজ চা বা গ্রিন টি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। সবুজ চা-কে বলা হয় মেডিসিন্যাল ড্রিংক। ক্যামেলিয়া সিনেনসিজ প্রজাতির গুল্মগাছ থেকে প্রক্রিয়াজাত হয়ে নানা ধরনের চা উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে সবুজ চা বা গ্রিন টি সবুজ পাতা থেকে সরাসরি উৎপন্ন হয়ে থাকে। ফলে সবুজ চা-ই আসল চা বলে পরিচিত। সবুজ চা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর পানীয়। কারণ সবুজ চা বিশেষভাবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভেষজ, যা নানা ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
সবুজ চা যেসব ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে বলে গবেষকেরা প্রমাণ পেয়েছেন সেগুলো হলো- স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, চর্ম ক্যান্সার এবং মুখ ও গলনালীর ক্যান্সার। প্রতিদিন নিয়মমাফিক সবুজ চা পান বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। সবুজ চা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সতেজ রাখে। হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে। শরীরের চর্বি দহনে কার্যকর বলে স্থূল বা মেদবহুল ব্যক্তিরা নিয়মিত সবুজ চা পান করতে পারেন। কোলেস্টেরল কমাতেও সবুজ চা বেশ উপকারী। মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা থেকে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে সবুজ চায়ের বিকল্প নেই। পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা শক্তিশালী করতে সবুজ চা অত্যন্ত উপকারী। ত্বকের কোমলতা ও মসৃণতা সতেজ রাখতে পান করতে পারেন সবুজ চা। মহিলাদের সৌন্দর্যচর্চায়ও নিয়মিত পান করুন সবুজ চা। শরীরের কর্মক্ষমতা রক্ষা ও দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে সবুজ চা। মোটকথা, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রধান ভেষজ হিসেবে সবুজ চা নিয়মিত পান করতে পারেন সবাই। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস, কোল্ড অ্যালার্জি, বমি বমি ভাবসহ পাকস্থলীর উত্তেজনা কমাতেও সাহায্য করে সবুজ চা।
সবুজ চা সঠিকভাবে বানাতে হবে। চা বানানোর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণভাবে চায়ের কাপে ছাকনিতে সবুজ চা-পাতা রেখে তার ওপর ফুটন্ত গরম পানি ঢালতে হবে। তারপর দু-তিন মিনিট পর চা-পাতার ছাকনি তুলে ফেলে কয়েক মিনিট ঠাণ্ডা করে তা পান করতে হবে। কেউ ইচ্ছা করলে আদা, লেবু ও মধু মিশিয়েও সবুজ চা পান করতে পারেন। দিনে দু-তিন কাপ চা পান করা যায়।