কাতালানের স্বাধীনতা নিয়ে অনিশ্চয়তা
চার দশকে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সঙ্কটে স্পেন
বিশ্বের মানচিত্রে কি আরো একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম যোগ হতে চলেছে! স্পেনের কাছ থেকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে তাতে কি স্পেন বা বাকি বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে! নাকি এমন স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কটে ডুবে যাবে স্পেন! এই মুহূর্তে এমন অনেক প্রশ্ন বিশ্বের রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মনে।
স্পেনের জনসাধারণ সোমবার সকালে এমনই একটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে সামনে নিয়ে ঘুম থেকে জেগেছেন। স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা এখন কয়েক দিনের ব্যাপারমাত্র কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা কার্লেস পাউগডেমন্ট এমন ঘোষণা দেয়ার পর থেকে সেখানে আতঙ্ক চরম আকার ধারণ করেছে। স্বাধীনতার দাবিতে গত ১লা অক্টোবর তিনি বিভক্ত গণভোট দিয়েছেন। তা নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক। এতে শতকরা ৯০ ভাগ ভোটার তাকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করার জন্য তিনি এখন মুখিয়ে আছেন।
তিনি বলেছেন, গণভোটে মানুষের যে দাবি উঠে এসেছে তা বাস্তবায়ন করবেন তিনি। কিন্তু স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ এই ভোটকে বেআইনি ও অকার্যকর বলে আখ্যায়িত করেছে। এখন থেকে চার দশক আগে স্পেন গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করে। তারপর থেকে এই প্রথম মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার (কাতালোনিয়া) মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যেকোনোভাবেই স্বাধীনতা ঘোষণাকে বন্ধ করতে আইনের ভিতরে থেকে সমস্ত হাতিয়ার ব্যবহারের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়।
শনিবার তিনি এল প্যারিস পত্রিকাকে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, আমরা স্বাধীনতার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে যাচ্ছি। আমি আপনাদেরকে আরো খোলাভাবে বলতে চাই, স্বাধীন হচ্ছে না (কাতালোনিয়া)। আইন আমাদেরকে যতটুকু অনুমোদন করে তা ব্যবহার করে আমরা সেটা ঠেকাবো।
এমন অবস্থায় মঙ্গলবার অধিবেশনে বসছে কাতালান পার্লামেন্ট। সোমবার তাদের অধিবেশনে বসার পূর্ব নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে স্পেনের সাংবিধানিক আধালত কাতালান পার্লামেন্টের ওই অধিবেশন স্থগিত করে। কাতালানের স্বাধীনতার বিরোধি, বিরোধী দল সোশালিস্ট পার্টি। তাদের করা আবেদনের জবাবে সাংবিধানিক আদালত ওই সিদ্ধান্ত নেয়।
ফলে সোমবার নয়, মঙ্গলবার বসার কথা সেই অধিবেশন। ওদিকে কাতালানের প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্টের দল পপুলার ইউনিটি ক্যান্ডিডেসি পার্টি (সিইউপি) আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সোমবারই অধিবেশনে বসার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু এদিনে তারা বসতে পারবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ফলে ধরে নেয়া হচ্ছে কাতালান পার্লামেন্ট বসবে মঙ্গলবার।
পার্লামেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় আহ্বান করা হয়েছে পার্লামেন্ট অধিবেশন। সেখানে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সদস্যদের ব্রিফিং করবেন প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইগডেমন্ট। এ সময়েই তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে বসতে পারেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যানজেলেসের ফ্রেঞ্চ অ্যান্প ফ্রাঙ্কোফোন স্টাডিজ বিভাগের চেয়ার ডোমিনিক থমাস এমনটাই মনে করেন।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ মানুষই মনে করছেন কাতালান প্রেসিডেন্ট সেদিকেই ধাবিত হচ্ছেন। তিনি পার্লামেন্টের ওই অধিবেশনকে ব্যবহার করে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে দিতে পারেন অথবা গণভোটের ফল ঘোষণা করতে পারেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ মনে করছেন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাই দিয়ে দিতে পারেন। যা-ই ঘটুক এই সপ্তাহেই ঘটতে পারে।
এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, কাতালানের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই বিভক্তি শুধু মাদ্রিদ বা বার্সেলোনায়ই নয়, বিভক্তি দেখা দিয়েছে কাতালোনিয়ার ভিতরেও। ওদিকে স্পেনের সঙ্গেই থাকার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে রোববার ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে বার্সেলোনায়।
তারা বলেছেন, একই সঙ্গে কাতালান ও স্প্যানিশ হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আবার স্বাধীনতার পক্ষেও বিক্ষোভ হয়েছে। এই পক্ষ বলছে, স্পেনের সঙ্গে তাদের সংস্কৃতির ব্যবধান অনেক। তারা অন্য এলাকার তুলনায় বেশি আর্থিক অবদান রাখে স্পেনে।
এক্ষেত্রে ডোমিনিক থমাস বলেন, একীভূত স্পেনের পক্ষেই জোর বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হলে তাকে ভালভাবে নেয়া হবে না বলেই মনে হচ্ছে। অনেক মানুষ ১লা অক্টোবরের গণভোটের দিনে বাসায়ই অবস্থান করেছেন। তারা ভোটকেন্দ্রে যান নি। ফলে তাদের অবস্থান পরিষ্কার নয়।
উল্লেখ্য, কাতালান হলো স্পেনের সবচেয়ে ধনী এবং উৎপাদনমুখী অঞ্চলে। এ জন্যই কি কাতালান স্বাধীন হতে চাইছে! পিলার নামে একজন পেনশনার বলেছেন, যদি স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়াই হয় তাহলে আমি কাতালোনিয়াতে থাকবো না।