অস্ত্র বিক্রিতে শীর্ষে ব্রিটেনের বিএই সিস্টেম
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএই সিস্টেম একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি যার হেডকোয়ার্টার ব্রিটেনের লন্ডনে। কোম্পানিটি এরোস্পেস, সিকিউরিটি এবং ডিফেন্স বিভাগগুলোতে বিশেষ দক্ষ। প্রধান সার্ভিসগুলো হচ্ছে সিভিল ও মিলিটারি এরোস্পেস, ডিফেন্স ইলেক্ত্রনিক, নাভাল ভেসেল, এবং ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার সিস্টেম। এর বড় অপারেশনগুলো যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক। এফটিএসই ১০০ নিয়ে কোম্পানিটি গঠিত এবং এর স্টক লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেড করা হয়।
ব্রিটিশ এই কোম্পানি ২০০৮ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করে বলে জানায় সুইডেনভিত্তিক গবেষণাসংস্থা ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (এসআইপিআরআই)। ২০০৮ সালে বিএই সিস্টেম সবচেয়ে বেশি অস্ত্র উৎপাদন করে এবং তিন হাজার ২৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে। ২০০৮ সালে ২০০৭ সালের চেয়ে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ১১ শতাংশ বেশি এবং উৎপাদিত অস্ত্রের ৫৯ শতাংশ বিক্রি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাজারে।
চালকবিহীন ট্যাঙ্ক
বিএই সিস্টেম চালকবিহীন ছোট ট্যাঙ্ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। সৈনিকদের সাহায্য করতে এখন থেকে মাথার ওপরে থাকবে মানববিহীন বিমান আর ভূমিতে চালকবিহীন ট্যাঙ্ক। নতুন এই ট্যাঙ্কটির নাম দেয়া হয়েছে আয়রনক্ল্যাড। এটি মানুষের সহায়তা ছাড়াই সরাসরি শত্রু পক্ষের অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে, সৈন্যদের অন্যত্র সরিয়ে নিতেও কাজ করবে। এছাড়া বিস্ফোরক অপসারণ ইউনিট হিসেবেও কাজ করতে পারবে এটি। এই ট্যাঙ্ক চালানোর কাজটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করে দেয়া হবে, নিজেই নিজেই শত্রু পক্ষের ওপর মরণাঘাত হানতে পারবে।
গোপনে গণনজরদারি প্রযুক্তি
মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের কাছে গোপনে গণনজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করেছে ব্রিটেনের বৃহত্তম অস্ত্র কোম্পানি বিএই। নজরদারির এ সূক্ষ্ম প্রযুক্তি বিশালসংখ্যক জনগণের ই-মেইল ও মোবাইল ফোনের ওপর নজরদারি ও গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহার করা যাবে। এ প্রযুক্তি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, আলজেরিয়া এবং মরক্কোর কাছে বিক্রি করেছে বিএই। এ প্রযুক্তির সহায়তায় একসঙ্গে অনেক মানুষের ই-মেইল এবং মোবাইল ফোনের বিরুদ্ধে আড়িপাতা সম্ভব। সংকেত ব্যবস্থার মাধ্যমে যেসব বার্তা আদান-প্রদান করা হয় তাও ভেঙে ফেলতে পারে এ প্রযুক্তি।
অস্ত্র ব্যবসায় এগিয়ে বোয়িং কোম্পানি, কর্মীসংখ্যা ১৬ লক্ষাধিক
বোয়িং কোম্পানি (The Boeing Company) একটি বহুজাতিক মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৬ সালে উইলিয়াম ই. বোয়িং ওয়াশিংটনের সিয়াটলে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন। ১৯৯৭ সালে বিমান নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠানটি আরেকটি বিখ্যাত বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনেল ডগলাস এর সাথে একত্রীভূত হয়। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি ২৮ বিলিয়ন ইউএস ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে, ৫.২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের মুনাফা করে।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট সদর দপ্তর আমেরিকার শিকাগোতে স্থাপন করা হয়। বোয়িং কোম্পানি ৬টি বিশেষ ইউনিটে বিভক্ত। বোয়িং বাণিজ্যিক বিমান (বিসিএ), বোয়িং সামরিক, মহাকাশ ও নিরাপত্তা, প্রকৌশল, পরিচালনা ও প্রযুক্তি, বোয়িং ক্যাপিটাল ও বোয়িং শেয়ারড সার্ভিসেস গ্রুপ। কোম্পানিটির এফ-১৫, এফ-১৮ এবং এফ-২২ এয়ারক্রাফটসহ অস্ত্র বিক্রিই মোট ব্যবসার ২৯ ভাগ।
বোয়িং কোম্পানির ধরণ পাবলিক। শিল্প হচ্ছে- খেয়াযান, সামরিক। কোম্পানির পণ্যসমূহ হচ্ছে-বাণিজ্যিক বিমান বহর, সামরিক বিমান, মহাকাশ গবেষণা, কম্পিউটার সার্ভিসেস। ২০১০ সালে কোম্পানিটির আয় ছিল ৬৪.৩০৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার, বিক্রয় আয় ছিল ৫.০২৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার, মুনাফা ছিল ৩.৩০৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার, মোট সম্পদ ছিল ৬৮.৫৬৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার, মোট ইকুইটি ছিল ২.৭৭৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল কর্মীসংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৪ হাজার ৪৯৫ জন। বিভাগসমূহ হচ্ছে-বোয়িং কমার্সিয়াল এয়ারপ্লেনস, বোয়িং ডিফেন্স-স্পেস এন্ড সিকিউরিটি। অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- Aviall, Inc. CDG, Jeppesen, Boeing Aircraft Holding Company, Boeing Australia, Boeing Canada, Boeing Defence UK, Boeing Store, Narus ওয়েবসাইট http://www.boeing.com
অস্ত্রের ব্যবসায় শীর্ষ কোম্পানি লকহেড মার্টিন
লকহীড মার্টিন (Lockheed Martin) একটি মার্কিন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রতিরক্ষা, তথ্য নিরাপত্তা কোম্পানি। কোম্পানির ধরণ পাবলিক। লকহেড মার্টিন ২০১৫ সালে ৩৬ বিলিয়ন ইউএস ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে। তন্মধ্যে মুনাফা হয় ৩.৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১১ সালে আয় ছিল ৪৬.৪৯৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার, বিক্রয় আয় ছিল ৩.৯৮০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, মুনাফা ছিল ২.৬৫৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৭ সালের অক্টোবরে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এ কোম্পানিটির মোট বাজার দর ছিল ৯১ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
আরেক হিসাবে কোম্পানিটির রাজস্ব ৪৫.৬বিলিয়ন ইউএস ডলার। এর প্রডাক্টসমূহ হচ্ছে- সি-১৩০ হারকিউলিস, সি-ফাইভ গ্যালাক্সি, এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, পি-৩ অরিয়ন, এফ-২২ র্যাপ্টর, এ-৪ এআর ফাইটিং হক, ডিএসসিএস-৩ উপগ্রহ, ট্রাইডেন্ট ক্ষেপণাস্ত্র এবং ফিফথ জেনারেশন এফ-৩৫ লাইটেনিং ২ স্টিলথ ফাইটার এগুলো এ প্রতিষ্ঠানের এয়ারক্রাফট| কোম্পানির স্লোগান হচ্ছে- “We never forget who we’re working for.” ওয়েবসাইট হচ্ছে http://www.lockheedmartin.com.
পিএসি-৩ এবং থাড সিস্টেমস উৎপাদনকারী হিসেবে বিখ্যাত| আমেরিকা ও পৃথিবীব্যাপী এ প্রতিষ্ঠান বিখ্যাত অস্ত্র উৎপাদনকারী হিসেবে এবং পেন্টাগন এর বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পরিচিত | পণ্যসমূহের মধ্যে আরো রয়েছে- এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, মিসাইল ডিফেস অ্যাজেন্সি, মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফট, জঙ্গিবিমান, রাডার, স্যাটেলাইট, অ্যাটলাস রকেট, স্পেসক্রাফট।
১৯৯৪ সালের মার্চে লকহীড কর্পোরেশন ও মার্টিন ম্যারিয়েট্টা কোম্পানির সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চে লকহীড কর্পোরেশন ও মার্টিন ম্যারিয়েট্টা কোম্পানির সংযুক্তির মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর ম্যারিল্যান্ডে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের হিসাবে কোম্পানিটিতে ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ কাজ করে। লকহীড মার্টিন বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ অস্ত্র বিক্রেতা। এটি পাঁচটি অংশের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে।
১৯৯৪ সালের মার্চে লকহীড কর্পোরেশন ও মার্টিন ম্যারিয়েট্টা কোম্পানির সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ সংযুক্তি চূড়ান্ত হয়। এর সদরদপ্তর হচ্ছে ম্যারিল্যান্ড।