মিয়ানমারের জেনারেলদের নিষিদ্ধের প্রস্তাব ইইউতে অনুমোদন
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের কারণে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এ ব্যাপারে একটি খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ২৮ দেশভুক্ত সংস্থার কূটনীতিকরা।
এটি আগামী সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। তাদের স্বাক্ষরের পর সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
তবে মিয়ানমার সরকার সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছে। দেশটির সরকার এ বিষয়ে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে খুব বেশি অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে না। তবে এতে গণতন্ত্র ও শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
ইইউর কূটনীতিকদের অনুমোদন করা খসড়ায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেছে। এ কারণে ইইউ এবং তার সদস্য দেশগুলো মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীপ্রধানদের এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্তাদের সফরের আমন্ত্রণ স্থগিত রাখবে। এছাড়া সব সামরিক সহযোগিতাও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের গণহারে দেশত্যাগ স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের বিতাড়নের জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ ছিল। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ নিপীড়নে ব্যবহার করা যায় এমন সব অস্ত্র ও সরঞ্জাম বিক্রি নিষিদ্ধ করে রেখেছে ইইউ। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংকটের সুরাহা না হলে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে। গত মাসে ইউরোপীয় সংসদে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা শেষে দেয়া এক বিবৃতিতেও মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেয়া হয়।
মিয়ানমারের হুশিয়ারি : যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞায় ভালো কিছু হবে না বলে হুমকি দিয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমার টাইমসকে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব না পড়লেও পরিবর্তন আসবে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের সংকট। ব্যাহত হবে শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। ওই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও বৌদ্ধ নেতাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা রয়েছে আলোচনার টেবিলে। এছাড়া মিয়ানমারে বিনিয়োগ স্থগিত করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এ ব্যাপারে দেশটির পরিকল্পনা ও অর্থমন্ত্রী উ তুন তুন নাইং বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা শোনা যাচ্ছে। এটা ভালো খবর নয়। অর্থনৈতিকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তারা আমাদের অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা সব দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাই। যখন কেউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায়, আমাদের রাখাইন নিয়ে সত্য বলতেই হয়। এই নিষেধাজ্ঞা আমরা চাই না। আমরা প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরব।’
মিয়ানমার টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে মিয়ানমারের ওপর সরাসরি প্রভাব কম পড়বে। তবে এতে কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হওয়ার মধ্য দিয়ে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উ তুন তুন বলেন, যেই দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বেশি তাদের সঙ্গে ব্যবসায় প্রভাব ফেলতে পারে। চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সঙ্গে মিয়ানমারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অনেক কম। তাই এই নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিকভাব খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না মিয়ানমার।
ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইউ ইয়ে মিন উ বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমারে বিভক্তি ও অনৈক্যের সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার এখনও অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রাম করছে। নিষেধাজ্ঞায় দেশটি আরো বিপাকে পড়বে। এটা সরকারের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই এই মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা আরোপে কারোরই লাভ হবে না।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির দফতরের মুখপাত্র উ জাও তায় বলেন, নিষেধাজ্ঞার ধরন কেমন সেটা বিবেচ্য নয়। পশ্চিমের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ শান্তি স্থাপন এবং মানুষের জীবন মানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।