রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ বিশ্ব সম্মেলনের ডাক
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘প্লেজিং কনফারেন্স’ নামে বিশ্ব সম্মেলনের ডাক দিয়েছে জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা। আগামী ২৩ অক্টোবর জেনেভায় মন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকে আছে প্রায় চার লাখ। এদের মানবিক সহায়তায় প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কুয়েত এই সম্মেলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দফতর ইউসিএইচএ, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম এবং জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এই প্লেজিং কনফারেন্সের (প্রতিশ্রুতি সম্মেলন) আয়োজন করছে। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং তাদের উদারভাবে আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশের প্রয়োজনের সময়ে বিশ্ব তাদের পাশে আছে- এমন বার্তা দিতেই এই সম্মেলন।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। ইইউ মিয়ানমারের জেনারেলদের ইউরোপে প্রবেশে নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। বিশ্বব্যাংকও মিয়ানমারে ঋণ বাতিল করেছে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। অপরদিকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্বব্যাপী এমন আলোড়নের মধ্যে রাখাইন রাজ্য থেকে তাদের বিতাড়ন অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার। এ বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক যুক্ত বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং এমন সম্মেলন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। ওই তিন সংস্থার প্রধানের যুক্ত বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া সংকট হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা এটাকে বড় একটি জরুরি মানবিক সংকটও বলেছেন।
জাতিসংঘের মতে, এ অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ‘শরণার্থীর’ প্রবেশ। তাদের সহায়তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় দাতব্য সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবক, জাতিসংঘ ও এনজিওগুলো কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এই সহায়তাকে যথেষ্ট মনে করছে না জাতিসংঘ। যুক্ত বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা, নিরাপত্তা ও মৌলিক আশ্রয় নিশ্চিতের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক স্থানে এখনও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা নেই। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এতে আশ্রয়গ্রহণকারী ও স্থানীয়দের উভয়ের জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
এ তিন সংস্থার যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিতে সীমান্ত খুলে দিয়েছে। পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য নিশ্চিত করেছে নিরাপত্তা ও আশ্রয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের আর্তি আর উদারতা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেছে। এবার জেনেভায় মানবাধিকার সমন্বয় সংস্থা (ওসিএইচএ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও জাতিসংঘের শরণার্থী কমিশন ইউএনএইচসিআর সম্মেলনে বসছে। ওই বৈঠকে বিভিন্ন দেশের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে। ভাগ করে নেবে দায়িত্ব। যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান, পালিয়ে আসার পরিসমাপ্তি ঘটানো লক্ষ্যে তৎপরতা জোরদার করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে ফিরে যেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, জাতিসংঘ সাহায্য বিষয়ক প্রধান মার্ক লোকক এবং আইওএম প্রধান উইলিয়াম লেসি সুইং বলেছেন, ‘এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই হতে হবে। তারা বলেন, পালিয়ে আসা পরিবারের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ তার সীমান্ত খুলে রেখেছে। আমরা স্থানীয় জনগণকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার প্রশংসা করি।
সম্মেলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে ইইউ ও কুয়েত। তাদের দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সংকট সারা বিশ্বের সরকারগুলোর কাছে দায়িত্ব পালনের সংহতি ও এই দায় ভাগাভাগি করে নেয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান এরই মধ্যে হাতে নেয়া হয়েছে।