ল্যাটিন নারীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে
মুহাম্মাদ শোয়াইব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ল্যাটিনদের মাঝে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষকরে ল্যটিন নারীরা ব্যাপক সংখ্যায় ইসলামের ছায়া তলে আসছেন।
দেশটিতে বসবাসরত ল্যাটিন-আমেরিকান নারীদের জন্য ক্যাথলিক ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তর খুব সহজ না হওয়া সত্ত্বেও বলা চলে তারাই হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত ক্রমবর্ধমান জাতিগত গোষ্ঠী, যারা ইসলামের ছায়ায় আসছেন।
কেউ কেউ বলছেন, এসব নারীরা আরব হবার জন্য তাদের ঐতিহ্যকে ত্যাগ করছে। তবে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন তাদের অনেকের জন্য এটি অত্যন্ত কঠিন রাজনৈতিক সময়।
লুসি সিলভা একজন মুসলিম। তিনি ১৮ বছর আগে ক্যাথলিক ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।
তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে যারা হঠাৎ করেই মুসলমান হন এবং হিজাব পরা শুরু করেন। কিন্তু আমি মুসলমান হওয়ার আগে অনেক সময় নিয়ে বিস্তর গবেষণা করার পরই ইসলাম গ্রহণ করি।’
তিনি ছিলেন একবার মেক্সিকান ও ক্যাথলিক এবং বর্তমানে একজন মেক্সিকান ও মুসলিম।
লুসি বলেন, ‘তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমান করে নেয় যে, আমি আরব কিংবা সেখান থেকে এসেছি। সুতরাং তারা যখন আমাকে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতে শুনে বিশেষকরে যখন আমি কোন মুদি দোকানে কেনাকাটা করতে অথবা আমি আমার মা বা ছেলের সঙ্গে কথা বলছি তখন তারা বেশ আশ্চর্য হয়ে যায়। তারা বলে, ‘আপনি কোথা থেকে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতে শিখলেন? তখন আমি বলি, ‘ওয়েল, আমি একজন মেক্সিকান।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঠিক কতজন লাতিনো এবং লাতিনা মুসলমান রয়েছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। কারণ তাদের নিয়ে কখনো কোনো সরকারি গবেষণা করা হয়নি। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন তাদের এই সংখ্যা ১৫০,০০০ থেকে ২০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।
ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের ৯০ শতাংশই ধর্মান্তরিত মুসলিম এবং এদের অধিকাংশই নারী।
সত্য বলতে, লাতিনো এবং লাতিনা মুসলমানরা হচ্ছেন ইসলামের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান জাতিগত গ্রুপ।
অরেঞ্জ কাউন্টির ইসলামিক ইন্সটিটিউটের ইমাম মোস্তফা উমর বলেন, ‘তাদের অনেকের মূল্যবোধের ধারা ইতোমধ্যে রক্ষণশীল মূল্যবোধে পরিণত হচ্ছে। যীশুর প্রতি তাদের উচ্চ সম্মান রয়েছে; যাকে আমরা ইসলামে নবী বলে থাকি। যীশুর মা মরিয়মের জন্যও তাদের উচ্চ সম্মান রয়েছে। তাই সেখানে ধর্ম, ঈশ্বরের ধারণা এবং ঈশ্বরের জন্য ভালবাসা- এই ধরনের সংযোগ রয়েছে।’
উয়ান্ডা নামে আরেক ধর্মান্তরিত তরুনী বলেন, ‘আপনি যদি একটি ঐতিহ্যগত হিস্পানিক পরিবারে বড় হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে এটি ইসলামের অনুরূপ।’
তিনি পুয়ের্তো রিকো থেকে এসেছেন এবং একজন কিশোরী হিসাবে ৯/১১ এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।
ওয়ান্ডা বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১১ বছর তখন আমি ড্রাগ ও অ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত ছিলাম এবং আমার জন্য ইসলাম একটি স্থিতিশীল কাঠামোর চেয়েও বেশি কিছু ছিল।’
কিন্তু একটি কঠোর ক্যাথলিক পটভূমি থেকে এসে ইসলাম গ্রহণ করাটা আমার জন্য অতটা সহজ ছিল না।
ওয়ান্ডা বলেন, ‘আমার ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়া কারণ বুঝতে আমার মায়ের প্রায় পাঁচ বছর লাগে। এটি বুঝতে পারা তার জন্য বেশ কঠিন ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি আমাকে ঘর থেকে ছুড়ে ফেলে দেন। আমি বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হই। ওই সময় আমি ছিলাম মাত্রই ১৬ বছরের কিশোরী।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারপরে একদিন আমার মা আমাকে ফোন দেন এবং বাড়ি ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেন এবং তার সঙ্গে থাকার জন্য বলেন। তিনি আমাকে বলেন, আমি কেন মুসলিম হয়েছি তা বুঝার জন্য তিনি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন এবং তিনি তার মনোভাবের পরিবর্তন আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। এখন আমাদের মধ্যে একটি আশ্চর্যজনক সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং এটি দেখতে অত্যন্ত চমৎকার।’
উয়ান্ডা এবং লুসির মত নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত কঠিন, বিশেষকরে যখন ধর্মীয়, ঐতিহ্য এবং লিঙ্গের সঙ্গে রাজনীতির মিশ্রণ ঘটে। কিন্তু তাদের আশা কিংবা তাদের পরিচয় প্রত্যাখ্যান না করতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। -আলুকা