সিলেটে এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন’র বর্ণাঢ্য উদ্বোধন
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন প্রবাসীরা শিক্ষা-সমাজ, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। বর্তমান সরকার উদার দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে বিধায় প্রবাসীদের কল্যাণে আইন প্রণয়ন করছে। সরকারের যথেষ্ট সহযোগিতা এবং প্রবাসীদের আন্তরিকতার মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলা সম্ভব। প্রবাসীদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য সেল তৈরী করার উদ্যোগ শ্রীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের চিত্র প্রমাণ করে বাঙ্গালীরা কারো কাছে হাত পাতবার মত জাতি নয়। নিজেদের উন্নয়নে কাউকে পরোয়া করি না। কিন্তু কোনো দেশ যদি সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে আসতে চায় তবেই এক সাথে কাজ করবে সরকার।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সহযোগিতায় আয়োজিত এনআরবি গ্লোবাল এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নগরীর উপশহরস্থ আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে শনিবার ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট এনাম আলী এমবিই’র সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ এর চেয়ারম্যান ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি, ইয়াহইয়া চৌধুরী এমপি, বাংলাদেশ পুলিশ-এর আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক বিপিএম পিপিএম ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহমুদ-উস-সামাদ এমপি বলেন, বর্তমান বিশ্বে এটাই প্রতীয়মান যে, বাঙ্গালীরা আজ যা চিন্তা করে, অন্যান্যরা তা পরের দিন চিন্তা করে। সত্যিকারের দেশপ্রেমই পারে একটি সুন্দর সোনার বাংলা উপহার দিতে। প্রবাসীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। পাশাপাশি নিজের সন্তানকে ও দেশের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।
ইংল্যান্ডের বিশিষ্ট টিভি ব্যক্তিত্ব ঊর্মি মাজহারের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট খন্দকার সিপার আহমদ, এনআরবি গ্লোবাল বিজনেস কনভেনশন আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও সিলেট চেম্বারের পরিচালক নূরুল ইসলাম, বিবিসিসিআই এর ডাইরেক্টর জেনারেল সাইদুর রহমান রানু, এফবিসিসিআই এর পরিচালক সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জ-এর ডিআইজি মোঃ কামরুল আহসান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া, বিবিসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সিনিয়র উপদেষ্টা ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর মনির আহমদ, মেম্বারশীপ ডাইরেক্টর সরকুম খালেদ আহমদ, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশীপ ডাইরেক্টর আবুল হায়াৎ নুরুজ্জামান, প্রেস এন্ড পাবলিকরিলেশন ডাইরেক্টর আবুল কালাম আজাদ, কমিউনিটি এফেয়ারস ডাইরেক্টর ড. সানাওয়ার চৌধুরী, ডাইরেক্টর হেলাল খান, সিলেট চেম্বারের পরিচালক মোঃ হিজকিল গুলজার, জিয়াউল হক, মাসুদ আহমদ চৌধুরী, মোঃ সাহিদুর রহমান, আব্দুর রহমান, মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান (ভূট্টো), মুশফিক জায়গীরদার, আমিরুজ্জামান চৌধুরী, এহতেশামুল হক চৌধুরী, পিন্টু চক্রবর্তী, চন্দন সাহা, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, মোঃ আব্দুর রহমান (জামিল), হুমায়ুন আহমেদ, আলহাজ্ব মোঃ আতিক হোসেন, মুজিবুর রহমান মিন্টু।
অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সহ সভাপতি মোঃ এমদাদ হোসেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিবিসিসিআই এর পরিচালকবৃন্দ ও বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশ থেকে আগত এনআরবিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ২য় পর্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এনআরবিদের অবদান সংক্রান্ত একটি প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় মডারেটর ছিলেন স্কলার্সহোম-এর একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কবীর চৌধুরী। এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এস বি ফারুক, ডাব্লিউবিসিসিআই এর সভাপতি দিলাবর এ হোসাইন, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল এন্ড রিসোর্ট এর চেয়ারম্যান মুসলেহ উদ্দিন, বিবিসিসিআই এর পরিচালক ড. সানাওয়ার চৌধুরী, বিবিসিসিআই এর রিজিওনাল প্রেসিডেন্ট বশির আহমদ, ব্র্যাক সাজন এক্সচেঞ্জ লি. ইউকে এর প্রতিষ্ঠাতা এমডি এবং প্রধান নির্বাহী আব্দুস সালাম, ব্যাংক এশিয়া লি. এর ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাফওয়ান চৌধুরী, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লি. এর চেয়ারম্যান ফরাশত আলী।
অনুষ্ঠানের শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, সরকারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার নীতিমালায় সিলেটে একটি বিশেষ অথনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সিলেটের মৌলভীবাজারের শেরপুরে। মন্ত্রিপরিষদের ৬৩ তম সভায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সংশোধন) আইন-২০১৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নামে শেরপুরে ৩৫২ একর জমির উপর অবস্থিত অর্থনীতির এই নতুন সম্ভাবনার পূর্বদিকে রয়েছে সিলেট, পশ্চিমে হবিগঞ্জ, উত্তরে সুনামগঞ্জ ও দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা। ইতোমধ্যে সেখানে দেশিয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো জমি বরাদ্দ পেয়েছে। গড়ে উঠছে বড় বড় শিল্পকারখানা।
সিলেটের গোয়াইনঘাটের তামাবিল এলাকায় আরেকটি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে। শিগগির এর কার্যক্রম শুরু হবে। এরফলে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যাবে।
এদিকে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১৬২ দশমিক ৮৩ একর জায়গায় দেশের প্রথম ইলেকট্রনিক সিটি গড়ে তোলা হচ্ছে। হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৮ সালে শেষ হবে। এর ফলে সিলেট হয়ে উঠছে ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রবেশদ্বার।