ঐতিহ্য সংকটে শতাব্দী প্রাচীন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

Oxfordকৌলীন্য সংকটে পড়েছে ইংল্যান্ডের শতাব্দী প্রাচীন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার পরিবর্তে অর্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে অক্সফোর্ডের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অভিযোগটি করা হয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে। ব্রিটেনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বলা হয়, বেশি অর্থের আশায় বিদেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তির সময় মেধার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে দেশের বহু মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধু অর্থের জন্য ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সঙ্গে আপস করা উচিত কি না সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। অক্সফোর্ডে এক বছর পড়ার জন্য বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের এখন দিতে হয় ৩৫ হাজার পাউন্ডের বেশি। বিদেশিদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ন্যূনতম যে যোগ্যতা দরকার তাঁদের বেশির ভাগেরই তা থাকে না। প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ‘অ্যাসোসিয়েট স্টুডেন্টদের’ নিয়ে। এই শিক্ষার্থীরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্স শেষ করেন। কিন্তু নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাওয়ার আগে অক্সফোর্ডে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন দেখাতে পারলে সুবিধা হয় বলে অক্সফোর্ডে ভর্তির চেষ্টা করেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মেধার কম নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের অক্সফোর্ডে ঢোকার সুযোগ করে দিচ্ছে বেশ কিছু সংস্থা।
যথেষ্ট নম্বর না থাকা সত্ত্বেও ম্যাগডালেন, ক্রাইস্ট চার্চ ও নিউ কলেজের মতো ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানে ওই সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ঢুকে পড়ছেন তাঁরা। এ রকম ৩৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে অক্সফোর্ডের অধীনে। ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে একক ক্ষমতা। অক্সফোর্ডে সরাসরি ভর্তির সময় পড়ুয়াদের শিক্ষাগত যোগ্যতা খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হলেও এ ক্ষেত্রে ওই সংস্থাগুলো শুধু টাকার বিনিময়ে অক্সফোর্ডে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ওই সংস্থাগুলোকে মোটা টাকা দিয়ে নিয়মের ফাঁক গলে সাধারণ বিদেশি পড়ুয়ারা ঢুকে পড়ছেন ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র জানান, অক্সফোর্ডের নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য অ্যাসোসিয়েট পড়ুয়ারা বরাবরই টাকা দেন। এতে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ আসে, আবার অন্যদিকে অক্সফোর্ডের অমূল্য নানা গ্রন্থাগার ব্যবহার বা অন্য সুবিধা পান পড়ুয়ারা। অথচ চলতি বছরে ব্রিটেনেরই ২৫ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ফিরিয়ে দিয়েছে অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁদের বেশির ভাগেরই ভালো গ্রেড থাকা সত্ত্বেও অক্সফোর্ডে ভর্তির সুযোগ পাননি। অক্সফোর্ডে পড়তে ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের বছরে প্রায় ৯ হাজার পাউন্ড দিতে হয়। বিপরীতে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া যায় কয়েক গুণ বেশি। অর্থের পেছনে ছুটে দেশের মেধাবী পড়ুয়াদের বঞ্চিত করায় তাই আঙুল উঠছে নামি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button