ফিলিস্তিনীদের দুঃখের শতবর্ষ প্রবাহমান

Palestineকোথাও শিরোনাম ‘ফিলিস্তিনীদের দুঃখের শতবর্ষ’, কোথাও শিরোনাম ‘ফিলিস্তিনীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার শতবার্ষিকী’। শিরোনাম যাই হোক, ফিলিস্তিনীদের দুঃখের সাথে জড়িয়ে আছে বেলফোর ঘোষণা। ১৯১৭ সালে ২ নভেম্বর জারি করা বেলফোর ঘোষণাপত্রটি ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। মাত্র ৬৭ শব্দের একটি ঘোষণা। কিন্তু এর কারণে যে সংঘাতের সৃষ্টি হয় তা বর্তমান বিশ্বের জন্য বড় সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ওই ঘোষণার শতবর্ষ পূর্ণ হতে চললেও সংকটের কোন সুরাহা হয়নি। বরং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত এখনো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বড় সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ অ্যাভি শ্লায়াম প্রসঙ্গত বলেন, বেলফোর ঘোষণায় বৃটিশ সরকারের জন্য গৌরবের কিছু নেই। এই ঘোষণা ছিল লজ্জাজনক ও দুঃখজনক পদক্ষেপ। বৃটিশ সরকারের তাই লজ্জায় মাথা নত করা উচিত।
নির্মম বাস্তবতা হলো, শত বছর পরেও আজ আমাদের বেলফোর ঘোষণা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। এই ঘোষণায় আসলে কী রয়েছে? বেলফোর ঘোষণা ছিল ফিলিস্তিনে ‘ইহুদীদের জন্য একটি জাতীয় আবাস’ প্রতিষ্ঠায় ১৯১৭ সালে যুক্তরাজ্যের করা একটি প্রতিশ্রুতি। তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী আর্থার বেলফোর এক চিঠিতে বৃটিশ ইহুদি নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথসচাইল্ডকে ওই প্রতিশ্রুতি দেন। ফিলিস্তিন সে সময় অটোমান সা¤্রাজ্যের অংশ ছিল। ইহুদিরা সেখানে ছিল সংখ্যালঘু, মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ ছিল তারা। উল্লেখ্য যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) চলাকালীন সময়ে ওই ঘোষণা আসে এবং অটোমান সা¤্রাজ্যের পতনের পর তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে এতে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। তথাকথিত এই ম্যান্ডেট ব্যবস্থা মিত্রশক্তির দেশগুলো তৈরি করেছিল যা ছিল আসলে ঔপনিবেশিকতা ও দখলদারিত্বের এক নোংরা রূপ। বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, অটোমান সাম্রাজ্য ও বুলগেরিয়া পরাজিত হওয়ার পর এই ম্যান্ডেটের বলে বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ মিত্রশক্তির কর্তৃত্বে আসে। ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে বৃটিশ সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি ‘জাতীয় আবাস’ প্রতিষ্ঠা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বৃটিশ সরকার ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদিদের ফিলিস্তিনে গিয়ে বসবাসের সুযোগ করে দিতে থাকে। এর পরের ঘটনা তো সবার জানা।
বেলফোর ঘোষণার কারণে ভূমিপুত্র ফিলিস্তিনীরা আজ নিজ দেশেই অধিকার হারা। জুলুম-নির্যাতনের পাশাপাশি ক্রমাগতভাবে নিজ আবাসস্থল থেকে ফিলিস্তিনী নাগরিকদের উৎখাত করে যাচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। আর সেখানে বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে ইহুদিদের জন্য। এমন অন্যায় কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বড় বড় রাষ্ট্রগুলো। ফলে ফিলিস্তিনীদের দুঃখের রজনী প্রলম্বিত হচ্ছে, যার শুরু হয়েছিল শতবর্ষ আগে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button