ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালন তার ব্যক্তিগত আচরণের কারণে পদত্যাগ করেছেন। তিনি এমন এক সময়ে পদত্যাগ করলেন, যখন ব্রিটেনের বেশ কিছু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
ফ্যালন বলেছেন তার আচরণ যে মানের হওয়ার কথা, সেটি হয়তো সে মানের ছিল না।
মঙ্গলবার তিনি স্বীকার করেছেন যে, ১৫ বছর আগে তিনি সাংবাদিক ও রেডিও উপস্থাপিকা জুলিয়া হার্টলি-ব্রুয়ারের হাঁটু অশোভনভাবে স্পর্শ করেছিলেন। সে আচরণের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
ফ্যালন বিবিসিকে বলেছেন, ১৫ কিংবা ১০ বছর আগে যেটি গ্রহণযোগ্য ছিল, বর্তমানে সেটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বেশ কয়েকজন এমপি’র বিরুদ্ধে সম্প্রতি যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার প্রেক্ষাপটে ফ্যালকন হচ্ছেন প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি পদত্যাগ করলেন।
ফ্যালনের পদত্যাগের সাথে নতুন কোনো অভিযোগের সম্পর্ক নেই বলে মনে করছে বিবিসি। তবে বিষয়টি নিয়ে ডাউনিং স্ট্রিট কোনো মন্তব্য করেনি।
ফ্যালন বলেছেন, ব্রিটেনের সামরিক বাহিনী যে মানের আচরণ আশা করে তার আচরণ সে রকম ছিল না।
ফ্যালন মন্ত্রীপরিষদের একজন সদস্য হিসেবে তার ভূমিকাকে যে গুরুত্বের সাথে দেখেছেন সেটির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।
অতীতে আমার কিছু আচরণসহ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন এমপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের অনেকগুলোই মিথ্যা। কিন্তু আমি স্বীকার করছি যে অতীতে আমার আচরণ সর্বোচ্চ মানের তুলনায় ঘাটতি ছিল, এক বিবৃতিতে বলেন ফ্যালন।
বিবিসির অনুষ্ঠানে ফ্যালনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে তিনি ক্ষমা চাইবেন কিনা?
উত্তরে ফ্যালকন বলেন, আমার মনে হয় আমরা এখন সবাই অতীতের দিকে ফিরে তাকিয়েছি। সেখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যার জন্য আপনার অনুতাপ হতে পারে, যেটা ভিন্নভাবে করা যেত।
গত সাড়ে তিন বছর ধরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টিকে সম্মানের ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ব্রিটেনে মন্ত্রী-এমপিদের যৌন কেলেঙ্কারির নানা কাহিনী
ব্রিটেনে পার্লামেন্ট সদস্য এবং মন্ত্রীদের হাতে বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়েছে।
ব্রিটেনের পত্রিকাগুলো এখন প্রতিদিনই এ নিয়ে নানা রকম খবর ছাপছে।
জানা যাচ্ছে যে, যাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠছে তার মধ্যে কনসারভেটিভ এবং লেবার উভয় দলেই সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপিরা রয়েছেন।
কমন্স লিডার এ্যান্ড্রেয়া লিডসম বলেছেন, ক্যাবিনেট অফিস সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত করছে এবং গুরুতর অভিযোগগুলো পুলিশের কাছে তোলা উচিত।
প্রথমে খবর বেরোয় যে পার্লামেন্টের গবেষক ও সহকারীরা একটি গহোয়াটসএ্যাপ গ্রুপ ব্যবহার করে প্রধান দুই দলেল এমপিদের খারাপ ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করছেন। এর পর দি টাইমস রিপোর্ট করে যে একজন মন্ত্রীসহ চারজন এমপি বহুদিন ধরে ওয়েস্টমিনস্টারে তরুণীদের যৌন হয়রানি করে আসছেন।
একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি তার সহকারীকে ‘যৌন খেলনা’ কিনে আনতে বলেছিলেন।
আরেকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ১৯ বছর বয়স্ক এক তরুণীর সাক্ষাতকার নেয়ার পর তাকে আদিরসাত্মক মেসেজ পাঠান এবং তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন।
এর মধ্যে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার মাইকেল ফ্যালন সান পত্রিকার কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি সাংবাদিক ও রেডিও উপস্থাপিকা জুলিয়া হার্টলি-ব্রুয়ারের হাঁটু অশোভনভাবে স্পর্শ করেছিলেন।
কয়েকজন বলেছেন, এসব ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করলেও কোনো ফল হয়নি।
এন্ড্রেয়া লিডসম স্বীকার করেছেন যে এসব অভিযোগ আমলে নেয়ার বর্তমান পদ্ধতি যথেষ্ট নয়।
এসব ঘটনার রিপোর্ট বেরুনোর পর পার্লামেন্টের স্পিকার জনি বারকো ও লেবার নেতা জেরেমি করবিনসহ সিনিয়র রাজনীতিবিদরা এর তীব্র নিন্দা জানান।
এ নিয়ে ব্রিটেনের পত্রিকাগুলোয় ব্যাপক লেখালিখি হচ্ছে।
গতকাল দৈনিক টেলিগ্রাফ শিরোনাম করে, এই যৌন কেলেঙ্কারি এমপিদের টাকা খরচ নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছিলো – তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
লন্ডনের মেট্রো পত্রিকায় শিরোনাম করেছে ‘পেস্টমিনস্টার ক্র্যাকডাউন’ – অর্থাৎ যৌন-কীটদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।
টাইমস শিরোনাম করেছে যে এর ফলে কিছু মন্ত্রী বরখাস্ত হতে পারেন। -বিবিসি