কুখ্যাত বেলফোর ঘোষণার শততম বার্ষিকী
তীব্র সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্য
১৯১৭ সালের কুখ্যাত বেলফোর ঘোষণার শততম বার্ষিকীতে এ ঘোষণার জন্য যুক্তরাজ্যের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য সরকার এ দাবি ক্রমাগত অগ্রাহ্য করার প্রেক্ষিতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। সমালোচকরা বেলফোর ঘোষণাকে আজকের ইসরাইলি-ফিলিস্তিন সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এদিকে যুক্তরাজ্যের ক্ষমা প্রার্থনার দাবির সাথে সাথে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের দায়িত্বের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে মূল্যায়নেরও দাবি উঠেছে।
এক্সিটার বিশ^বিদ্যালয়ের ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর প্যালেস্টিনিয়ান স্টাডিজের পরিচালক প্রফেসর আইলান প্যাপি বলেন, এ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী কাজ। তবে তার সাথে জবাবদিহিতাবোধও থাকা দরকার। আমার কথা, বেলফোর ঘোষণার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ফিলিস্তিন বিষয়ে ব্রিটেনের বর্তমান পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন আনাই হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা।
উল্লেখ্য, গতকাল ২ নভেম্বর ছিল কুখ্যাত বেলফোর ঘোষণার শততম বার্ষিকী। ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আবাসভ‚মি প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা ও ব্রিটিশ সরকারের ছত্রছায়ায় ফিলিস্তিনে শুরু হয় ইহুদি আগমন এবং বহু ঘটনা মধ্য দিয়ে চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল আত্মপ্রকাশ করে। তখন থেকে ফিলিস্তিনিরাসহ মুসলিম বিশ^ প্রতি বছর বেলফোর ঘোষণার দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
এ ঘোষণায় প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল যে ফিলিস্তিনে থাকা অ-ইহুদি সম্প্রদায়ের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকারের কোনো হানি করা হবে না। অনেকেই বলেন, যুক্তরাজ্য এ প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করেছে যে কারণে ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে তার ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
ফিলিস্তিনি লেখক ও ডকুমেন্টারি নির্মাতা কার্ল সাবাগ বলেন, কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা যেসব দুর্দশার সম্মুখীন তার একটি হচ্ছে তাদের প্রতি যে অবিচার করা হচ্ছে তার স্বীকৃতি না পাওয়া।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্দোলনকারী গ্রুপ ফিলিস্তিনি প্রত্যাবর্তন কেন্দ্র ২৫ অক্টোবর বেলফোর ক্ষমা প্রার্থনা আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের দাবি, যুক্তরাজ্য স্বীকার করুক যে আজকের ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিভেদের জন্য তারাই দায়ী।
যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত এ ক্ষমা প্রার্থনার দাবি নাকচ করে আসছে। এপ্রিল মাসে এক সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, বেলফুর ঘোষণার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে না। অক্টোবরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে পার্লামেন্টে বক্তৃতায় তারই প্রতিধ্বনি করে বলেন, তার সরকার গর্বের সাথে ২ নভেম্বর বেলফোর ঘোষণার শতবার্ষিকী পালন করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ২৯ অক্টোবর ডেইলি টেলিগ্রাফে তার নিয়মিত কলামে লেখেন যে একটি দেশ সৃষ্টির জন্য বেলফোর ঘোষণা অপরিহার্য ছিল। এ ঘোষণা নিপীড়িত লোকদের একটি নিরাপদ ও নিশ্চিত আশ্রয় দিয়েছে। তিনি স্বীকার করেন যে বেলফোর ঘোষণায় ফিলিস্তিনি স্বার্থরক্ষার যে প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ২ নভেম্বর রাতে ইসরাইললের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ও নির্বাচিত এমপিদের সাথে বেলফোর ঘোষণার শতবার্ষিকী উদযাপন উৎসবে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন। এ পদক্ষেপ অনেককে ক্ষুব্ধ করেছে যারা ইসরাইলের বর্তমান সম্প্রসারণবাদী নীতি ও পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও তাদের কল্যাণের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচনা করেন। অন্যদিকে রয়াল আলবার্ট হলে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সম্মিলিতভাবে সঙ্গীত ও নৃত্য উসবের আয়োজন করেছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বেলফোর প্রজেক্ট-এর মুখপাত্র জন বন্ড বলেন, এটা উদযাপন করার মত কোনো শতবর্ষ নয়। এখন সময় এসেছে এ ঘোষণার পরিণতিতে কি ঘটেছে তার মূল্যায়ন করার। আমাদের সরকার যাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে জন্য আমরা কাজ করে যাব।
মানবাধিকার কর্মী ও লিগ্যাসি অব বেলফোর নামক ডকুমেন্টারি নির্মাতা মিরান্ডা পিনচ বলেন, ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমা প্রার্থনাকে ইসরাইলের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নের সাথে জড়িত করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন, অবৈধ দখলদারিত্ব ও ভ‚মি চুরির জন্য যুক্তরাজ্য সরকার ইসরাইলকে কার্যকরভাবে জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের ইতিহাসের রিডার এডাম সাটক্লিফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবশ্যই বেলফোর ঘোষণার শতবর্ষ উদযাপন করা উচিত নয়।