দাম্পত্য জীবনে চাই সহনশীলতা ও সহমর্মিতা

Romoniস্বর্ণালী ইসলাম: দাম্পত্য জীবনে প্রয়োজন বিশ্বাস। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা ভালোবাসা গভীর করে, সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। ছেলে কিংবা মেয়ে, অনেকেরই অভ্যাস আছে অযথা সন্দেহ করার। এতে সংসারের শান্তি নষ্ট হয়।
এই যেমন মোবাইল ফোনটা যখন-তখন বেজে উঠল তো সন্দেহটা বেড়ে গেল—কে ফোন দিল, কেন ফোন দিল? যিনি ফোন দিলেন তিনি নারী না পুরুষ? তার সঙ্গে অর্থাত্ ফোনের ওপাশের ব্যক্তির সঙ্গে কীভাবে কথা বলল—সবই খেয়াল করবেন এবং এক পর্যায়ে এই ছোট্ট ব্যাপারটি নিয়ে দু’জনার মধ্যে বড় ঝগড়াঝাটি বেধে যায়। এতে করে স্বামী-স্ত্রী দু’জনার মধ্যে সুখই নষ্ট হয়ে গেল। তারপর কেউ কারও মুখ পর্যন্ত দেখেন না, কথা বলেন না। স্বামী বেচারা হয়তো নিজের রুম ছেড়ে বসার রুমে গিয়ে শুয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। গৃহকর্তা খুব সহজেই এ ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারেন। মনে রাখতে হবে—সততা, বিশ্বাস, নির্ভরযোগ্যতা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যতটা গাঢ় হবে, সংসার তত সুন্দর ও সুখী হবে। স্ত্রী যেহেতু সন্দেহপ্রবণ, তাই রসিকতা করেও তার কাছে মিথ্যা বলার দরকার নেই। সব সময় সত্য বলুন, প্রয়োজনে মাঝে মাঝে তাকেও ফোন ধরতে দিন। দেখবেন সন্দেহ কেটে গেছে। স্ত্রীর অহেতুক সন্দেহ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি স্বামীরও উচিত সন্দেহের মতো কোনো কাজ না করা। স্বামীকেও মনে রাখতে হবে, সারাদিন বাইরের ঝামেলা মিটিয়ে ঘরে এসে বউ-বাচ্চাকেও সময় দেয়া উচিত। ঘরে এসেও যদি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন স্বামী, তবে ঝগড়া তো বাঁধবেই। সেক্ষেত্রে মোবাইলটা কিছুক্ষণ বন্ধ করে রাখুন। একটি কথা সত্য যে, মোবাইল ফোন নিয়ে বহু পরিবারে নানা ধরনের কলহের সৃষ্টি হচ্ছে, এর মধ্যে দাম্পত্য কলহ অন্যতম।
সাবিহা আক্তার চাকরিজীবী নারী। স্বামীর সঙ্গে তার খুবই সুন্দর সম্পর্ক। তারপরও মাঝে মাঝে দ্বন্দ্ব বেধে যায়। সাবিহা তার ছোট ননদীর হয়ে কথা বলেন আর তার স্বামী তার বড় বোনের হয়ে কথা বলেন। ব্যাপারটি এমন যে, বড় বোনের কোনো দোষই নেই। আর এ নিয়েই বেধে যায় তর্ক-বিতর্ক। এক্ষেত্রে স্ত্রীকে বুঝতে হবে, দু’জনই স্বামীর বোন। এক্ষেত্রে কারোরই পক্ষপাতিত্ব না করে যেটা ন্যায্য সেটা বলাই ভালো। সবচেয়ে ভালো চুপ থাকা, কারণ স্বামীর বাড়ির ব্যাপার তারাই মেটাবে, বউ হয়ে কথা বাড়িয়ে দাম্পত্য কলহ বাধানোর দরকার কী।
অবণী খানম স্কুল শিক্ষিকা। তার স্বামী বদমেজাজি। স্ত্রীর বাড়ির কোনো আত্মীয়-স্বজনকে দেখতে পারেন না। কারণে-অকারণে স্ত্রীকে সন্দেহ করেন। আর এ নিয়েই তাদের দাম্পত্য কলহ। স্বামী যদি হন উচ্চশিক্ষিত তবে তো তার বোঝার ক্ষমতা উন্নত হওয়া উচিত। তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, একটি মেয়ে সম্পূর্ণ নিজের পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে সুখের সন্ধানে স্বামীর গৃহে এসেছেন, এখানে তাকে প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করা উচিত, দুঃখে সহমর্মিতা দেখানো উচিত আর এটাই স্বাভাবিক। এটি না করে যদি উল্টো স্বামী অযথা সন্দেহ করেন তবে স্ত্রীর জীবন অতিষ্ঠ তো হবেই। আর স্ত্রীর বাপের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ভালো এবং সুন্দর ব্যবহার না করে কী করে তিনি তার বাড়ির লোকের প্রতি ভালো ব্যবহার আশা করেন? মনে রাখতে হবে, কিছু পেতে হলে কিছু ছাড় দিতে হয়।
মাধবী রহমান সরকারি চাকরিজীবী। স্বামী-সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার। কিন্তু সরকারি চাকরির কারণে তাকে প্রায়ই বদলি হতে হয়। আর এই বদলি নিয়ে সাংসারিক কলহ। বদলির কথা শুনেই স্বামীর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। এক্ষেত্রে স্বামীকে অবশ্যই বুঝতে হবে, স্ত্রী সরকারি চাকরিজীবী যেহেতু, তাই বদলির ব্যাপারটা অবশ্যই মেনে নিতে হবে। এ ব্যাপার নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি না করে বরং ব্যাপারটি কীভাবে গুছিয়ে নেয়া যায় বা কীভাবে অগ্রসর হলে কাজটি ভালো হয় তা নিয়ে সমঝোতায় আসা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিন।
উপরের দু’একটি খণ্ড চিত্র থেকেই সহজে বোঝা যায়, দাম্পত্য কলহ কতটা ভয়াবহ। স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া হয় না এমন পরিবার কমই আছে। আবার স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া হবে কেন, কখনোই ঝগড়া হবে না, এমনটিও বলছি না। দুটি ভিন্ন পরিবেশ থেকে বেড়ে ওঠা দুটি মানুষ সংসার গড়ে, এখানে মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, ছোটখাটো সাংসারিক ঝগড়াঝাটি হতে পারে। আর মান-অভিমান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এমনি ছোটখাটো দাম্পত্য কলহ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই মীমাংসা হওয়া উচিত। এমনটাই কাম্য। দাম্পত্য কলহ যদি বিরাট আকার ধারণ করে, সেই কলহ মেটাতে যদি আত্মীয়-স্বজনের মধ্যস্থতা করতে হয় তবে তা মোটেও সুন্দর বা সম্মানজনক হবে না। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীরই মীমাংসায় আসা সবচেয়ে ভালো। তারপরও পারিবারিক কলহ যদি তিক্ততায় গড়ায়, সেক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় ডেকে মীমাংসা করা যেতে পারে। তবে কখনও তা যেন মামলা-মোকদ্দমার পর্যায়ে না গড়ায়, কিংবা দাম্পত্য কলহ মারাত্মক আকার ধারণ করে বিবাহবিচ্ছেদ না ঘটে। এমনটি কারোরই কাম্য নয়। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া দু’জনার মধ্যে থেকে মান-অভিমানে ঠেকে, মিটে গেলেই সবচেয়ে সুন্দর। বরং এমনি ঝগড়া দাম্পত্য প্রেম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। একজনের আরেকজনের প্রতি সমঝোতা-সহমর্মিতা থাকলে ভালো। তাছাড়া ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলে তাদের সামনে কারণে-অকারণে ঝগড়া করাও শোভন নয়। আর ছেলেমেয়েরা ঝগড়া শুনে শুনে তারাও তো একদিন ঝগড়াই শিখবে। সবচেয়ে বড় কথা, পারিবারিক অশান্তি বা দাম্পত্য কলহ থাকলে তা ছেলেমেয়েদের যথার্থভাবে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে।’
যে পরিবারে সহনশীলতা-সহমর্মিতা যত বেশি, সে পরিবার ততটাই সুখের। তাই অকারণে একে অপরকে অবিশ্বাস না করে, বিশ্বাস করতে হবে। কোনো বিষয়ে মতের মিল না হলে স্বামী-স্ত্রী মিলে সমঝোতা করে নিতে হবে। এ কথাটি মনে রেখে আপসের সঙ্গে যে কোনো সমস্যা সহজেই মীমাংসা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button