সৌদি ‘বিলিয়নিয়ার’ আল-ওয়ালিদ গ্রেফতার
সৌদি আরবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ১১ যুবরাজ, চার মন্ত্রী এবং প্রায় ডজনখানেক সাবেক মন্ত্রী রোববার গ্রেপ্তার হওয়ায় দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। আর এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন সৌদি ‘বিলিয়নিয়ার’ যুবরাজ আল-ওয়ালিদ বিন তালাল। আল-ওয়ালিদ জন্মগ্রহণ করেন সৌদি আরবের জেদ্দায়, ১৯৫৫ সালের ৭ মার্চ।
সৌদি ব্যবসার মূল মুখপাত্র ভাবা হয় যুবরাজ আল-ওয়ালিদকে। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের মতে, ওয়ালিদের সম্পদের মূল্য ১৭ বিলিয়ন বা এক হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন ওয়ালিদ। তিনি সৌদি আরবের ‘সিটি গ্রুপ ইন করপোরেশন’র সবচেয়ে বড় একক বিনিয়োগকারী।
তাকে গ্রেপ্তারের পর এরই মধ্যে সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জ বা শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। তার মালিকানাধীন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘কিংডম হোল্ডিংস’র শেয়ারের মূল্য ১০ শতাংশ পড়ে গেছে। সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে সোমবার দিনের শুরম্নতে ব্যবসায়িক লেনদেনে এই ধস নামে। দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জ আরব বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
যদিও এই ধরপাকড়ের প্রতি সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের কাউন্সিল এক টুইট বার্তায় বলেছে, দুর্নীতি দমন অভিযান সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মতোই গুরম্নত্বপূর্ণ।
বিশেস্নষকরা বলছেন, দুর্নীতিবিরোধী এই ধরপাকড় এবং দুইজন মন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার পর সৌদি আরবের নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একক কর্তৃত্ব সুসংহত হচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘এসপিএ’ জানিয়েছে, যুবরাজের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিটিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পাশাপাশি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারিরও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কয়েক হাজার আন্ত্মর্জাতিক ব্যবসায়ীকে নিয়ে রিয়াদে একটি বিনিয়োগ সম্মেলন করেন। সেখানে সালমান বলেন, সৌদি আরবের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে তার পরিকল্পনার মূলমন্ত্র হবে- ইসলামের কট্টর অবস্থান থেকে উদারনীতিতে ফিরে আসা। তেলের বাইরে সৌদি অর্থনীতির জন্য ভিন্ন এক ধরনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার খোঁজে এই সম্মেলন করা হয়। কিন্তু ‘হাই-প্রোফাইল’ লোকজনকে আটকের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক ব্যবস্থায় ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
যুবরাজ ওয়ালিদ মালিকানাধীন কিংডম হোল্ডিং সৌদি আরবের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার রয়েছে ‘ইউরো ডিজনি থিম পার্ক’, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল’, রুপার্ড মারডকের ‘নিউজ করপোরেশন’ এবং আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়া, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও এই বিনিয়োগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
সিটি গ্রুপ ও টুইটার সামিটের অংশীদার। আন্ত্মর্জাতিক টিভি নেটওয়ার্কেরও মালিক তালাল। তিনি একাধারে সৌদি আরব ও লেবাননের নাগরিক। সৌদি শাসক আবদুল আজিজ আল-সৌউদ ছিলেন তার দাদা। বর্তমান সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের ছোট ভাই তালাল বিন আল সৌউদের ছেলে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। ১৯৮৮ সালে তিনি সর্বপ্রথম ফোর্বস ম্যাগাজিনের নজরে আসেন। ম্যাগাজিনটির তালিকায় ১০ প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্যতম হিসেবে উলেস্নখ করা হয় তাকে।