চাপ বাড়ছে তেরেসা মে’র ওপর

teresaব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র ওপর চাপ বাড়ছে। সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালনের পদত্যাগের পর টালমাটাল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।
এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বরখাস্ত করা হতে পারে আরও দুজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে। তারা হলেন আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জ্যোষ্ঠ কনজারভেটিভ নেতারা বলছেন, এ দু’মন্ত্রী যুক্তরাজ্যের গণমানুষের স্বার্থকে খাটো করে দেখেছেন।
এটা বরখাস্ত করার মতো অপরাধ। এই সঙ্গে ওই দু’জন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবি জোরালো হচ্ছে। এসব ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন তেরেসা মে। আর ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের ওপর। যদি তাকে চাপের কারণে বা সরকারের নৈতিকতার কারণে বরখাস্ত করা হয় তাহলে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বড় রকমের হোঁচট খাবে।
এমন অবস্থায় কি করবেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে! তিনি কি ব্রেক্সিট নিয়ে অগ্রসর হবেন! তিনি কি যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামাল দেবেন! নাকি এই দু’জন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করবেন! এসব প্রশ্ন এক হয়ে কঠিন এক প্রশ্নমালার মেঘ জমেছে তেরেসার মাথার ওপর।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে উন্নয়নমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল ব্যক্তিগত সফরে ইসরাইল যান। সেখানে তিনি বৃটেন সরকারের অনুমোদন না নিয়েই সে দেশের উচ্চ পদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকারীদের মধ্যে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু-ও ছিলেন। সেখানে তিনি বৃটেনের সাহায্য সংস্থা ইউকে এইডের অর্থ স্থানান্তর করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে দেবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। এই অর্থ সিরিয়ান গৃহযুদ্ধের শরণার্থীদের জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালিত একটি হাসপাতালে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়।
অথচ, এ বিষয়ে তিনি বৃটেন সরকারের না নিয়েছেন কোন অনুমোদন, না এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এ বৈঠকের কথা বৃটেন জানতে পারে প্রায় এক মাস পরে। সোমবার প্রীতি প্যাটেলকে তলব করেন তেরেসা মে। সেখানে তিনি প্যাটেলকে তার ইসরাইল সফরের সব তথ্য দিতে বলেন। তিনি কার কার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং কাকে কি ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- জানতে চাওয়া হয় সবকিছু। তিনি প্রধানমন্ত্রী মে’কে সম্পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে সবকিছু খুলে বলেন।
তবে মঙ্গলবার জানাজানি হয়, তিনি আসলে সবকিছু খুলে বলেন নি। লুকিয়েছেন বেশ কিছু তথ্য। এর ফলে পার্লামেন্টে নিন্দার ঝড় উঠেছে। পার্লামেন্টের সদস্যরা বলছেন, একজন দায়িত্বরত মন্ত্রীর এমন মিথ্যাচার পুরো মন্ত্রীসভাকে কলঙ্কিত করেছে। তারা প্যাটেলকে বরখাস্ত হবার পূর্বে নিজ থেকেই পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ইরানে গ্রেপ্তার হওয়া এক নাগরিকের জেল হওয়া নিয়ে অসংযত মন্তব্য করেন। নাজনিন যাগারি র্যাটক্লিফ (৩৮) নামের ইরানে ভ্রমণরত এক বৃটিশ নারী সাংবাদিককে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগে আটক করে ইরানের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। ইরানের সাংবাদিকদের দেশটিতে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য অনুপ্রাণিত করে পাঠ দেবার অভিযোগে তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই বৃটিশ সাংবাদিক।
তিনি দাবি করেছেন, তিনি ইরানে স্রেফ অবকাশ যাপন করছিলেন, অন্য কোনো কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না। অপরদিকে, এ ঘটনা নিয়ে বরিস জনসন মন্ত্রীসভার এক শুনানিতে বক্তব্য দেয়ার সময় সরাসরি দাবি করে বসেন যে, ওই সাংবাদিক ইরানের সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার পাঠ দিচ্ছিলেন। এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়লে ইরান ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীকে আদালতে তলব করে শাস্তি বাড়িয়ে দ্বিগুন করে দেবার হুমকি দেয়। জনসনের এমন অসংযত মন্তব্যে দারুণ ক্ষেপেছেন ওই সাংবাদিকের পরিবারের সদস্য এবং সাধারণ নাগরিকরা। একজন মন্ত্রী কিভাবে এমন অসংযত মন্তব্য করতে পারেন তা নিয়ে চলছে বিস্তর সমালোচনা। এ নিয়ে পরে জনসন অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তবে তা যে খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না তা বোঝা যাচ্ছে পার্লামেন্টের মন্ত্রীদের আচরনেই। কনজারভেটিভ দলের সাবেক মন্ত্রী আনা সবরি এক টুইটে বলেন, সাধারণ সময় হলে জনসনকে এতক্ষনে বরখাস্ত করা হয়ে যেতো। অন্যান্য মন্ত্রীরাও এ ধরণের অসংযত আচরণের দায়ে জনসনের অব্যাহতি চাইছেন।
তবে এ সম্পর্কে তেরেসা মে’র মুখপাত্র বলেছেন, প্রতরক্ষামন্ত্রী জনসন তার দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই পালন করছেন বলে আস্থা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মে। অবস্থাদৃষ্টে যদিও মে’র সমর্থন জনসনের প্রতি রয়েছে, তবে শক্ত জনমত গড়ে উঠলে তাকে বাধ্য হতে হবে জনসনকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিতে- এমন সম্ভাবনা থেকেই যায়।
কারণ এ ধরণের অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তা প্রধানমন্ত্রী মে’র বর্তমান রাজনৈতিক অসাড়তার অভিযোগকে আরো উস্কে দেবে। এমনটা হলে, গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালনের পর, পার্লামেন্ট থেকে ঝরে পড়তে পারেন আরো দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button