সউদী আরবে ব্রিটেনের অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে ৫০০ শতাংশ

Armsঅস্ত্র ব্যবসা বিরোধী সংগঠন ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট আর্ম ট্রেড (সিএএটি)’র তথ্য মতে সউদী আরবে যুক্তরাজ্যের তৈরি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি ৫শ’ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়েমেনে সউদী নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী ব্রিটেনের তৈরি এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে। বর্তমানে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সিএএটির সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরুর পর সউদী আরবে অস্ত্র ও অন্যার সরঞ্জাম বিক্রি থেকে যুক্তরাজ্য সরকারের আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি ৫১ হাজার ৩শ’ ১৪ কোটি টাকা প্রায়)। এটা ২০০৮-২০১৫ মেয়াদের ৬ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৪৫৭ শতাংশ বেশি। এ সংবাদ এমন সময় পাওয়া গেল যখন গত সোমবার ইয়েমেন সীমান্ত সিল করে দিয়ে বহির্বিশ্বের সাথে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে সউদী নেতৃত্বাধীন জোট। যুক্তরাজ্য সরকার যুদ্ধবিক্ষুব্ধ ইয়েমেনে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। ২০১৭ সালেই যুদ্ধবিক্ষুব্ধ দেশটিতে যুক্তরাজ্য ১৫৫ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি ১ হাজার ৬শ’ ৯ কোটি টাকা প্রায়) সহায়তা পাঠিয়েছে। যুক্তরাজ্যে নির্মিত অস্ত্র ইয়েমেনের স্কুল ও অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস করেছে, সহায়তা পৌঁছানো বাধাগ্রস্থ করেছে এবং কলেরা মহামারি সৃষ্টি করেছে। সঙ্ঘাত শুরুর পর থেকে সেখানে মারা গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। আহত হয়েছে ৪০ হাজার এবং দেশটির ৭০ শতাংশ মানুষের এখনই জরুরী সহায়তা প্রয়োজন।
সেফ দ্যা চিলড্রেনের প্রধান নির্বাহী কেভিন ওয়াটকিন্স বলেন, যুক্তরাজ্য ‘ইয়েমেনে সহায়তায় শীর্ষে অবস্থান করছে’ কিন্তু একই সঙ্গে সঙ্ঘাতের সহায়তায় অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে যা শিশুদের হত্যা, নিপীড়ন ও ক্ষুধার্ত করে তুলছে। সংস্থার দাতব্য প্রতিবেদন ‘নেক্সট জেনারেশন এইড’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের উচিত বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়ানো এবং ইয়েমেনের শিশুদের কাছে ভয় নয়, আশা রফতানি করা’। সেভ দ্যা চিলডেনের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ব্রিটিশ সহায়তা বাজেট কীভাবে শিশুদের সবচেয়ে ভাল সহায়তা করতে পারে।
সিএএটি সমন্বয়ক টম বার্নস ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন যে, সউদী নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলা বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্রিটিশ সরকার ইয়েমেনে নিষ্ঠুরতার অস্ত্র বিক্রি চাঙা করছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর ইয়েমেনের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে’।
‘যুক্তরাজ্যের যখন কমপক্ষে বিবেচনায় আনা উচিত যে, কী বিক্রি করা হচ্ছে, তখন সরকার আরো বেশি করে এর (অস্ত্র বিক্রির) লাইসেন্স দিচ্ছে’।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, ব্রিমস্টোন, স্টম শ্যাডো, পিজিএম ৫০০ হাকিম এবং অ্যালার্ম ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি রেইথিয়নের পেভওয়ে চতুর্থ বোমা। গত ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে ইয়েমেনের ক্ষুথার্ত লোকজন একটি দোকানের সারিতে দাঁড়িয়ে খাবার নেবার সময় বিমান হামলাস্থলে এ ধরনের বোমা পাওয়া গিয়েছিল।
সউদী নেতৃত্বাধীন জোট গত সোমবার সাময়িকভাবে ইয়েমেনের সাথে আকাশ, সমুদ্র বন্দর ও স্থল পথ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।
মানবিক সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তকে সহায়তার পথ বন্ধ করে দেশটিকে দুর্ভিক্ষের কিনারে নিয়ে যাওয়া এবং বিপর্যকর বলে আখ্যায়িত করেছে।
সেভ দ্যা চিলড্রেন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর তামের কিরলোস বলেন, ইয়েমেনের বন্দরগুলো দিয়ে আসা খাদ্য এবং ওষুধ হাজার হাজার শিশুকে বাঁচিয়ে রাখছে।
কিরলোস বলেন, সাহায্য প্রাপ্তি ইতোমধ্যে অনেক কঠিন হয়ে গেছে। আমরা এমন পথের ওপর নির্ভর করে আসতে বাধ্য হয়েছি যা ছিল অত্যন্ত দীর্ঘ ও ধীরগতির। কিন্তু সরবরাহ যদি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি যদি এক সপ্তাহের জন্যও, তবে এর ফল হবে বিপর্যকর।
‘এটা দুঃস্বপ্নের দৃশ্য এবং এর ফলে শিশুরা সম্ভবত মারা যাবে। এখন সাহায্যকর্মী এবং খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির মত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলো ইয়েমেনে অবাধে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া এবং সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার খুবই জরুরী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button