কওমি মাদরাসাগুলো যেভাবে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করবে
কাউসার জামিল: মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। বরং, সারা পৃথিবীখ্যাত একটি দীনী প্রতিষ্ঠান।
মাহবাতুল ওহীর পূণ্যভূমি মদিনা শহরে, মসজিদে নববী ও রওজায়ে আতহারের অতি সন্নিকেটে অবস্থিত হওয়ার ফলে এ দীনী প্রতিষ্ঠানটি সবার কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়েছে।এবং এই আকর্ষণ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে।
সেদিকে, লক্ষ্য করে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ল্ডের প্রায় সকল দেশ থেকে দীনী শিক্ষা লাভের জন্য জ্ঞান-পিপাসু ছাত্রদের ফুল স্কলারশিপ দিয়ে এখানে নিয়ে আসে/পড়ার সুযোগ দেয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় একশ’ নব্বইটা দেশের শিক্ষার্থী এই ইলমি অঙ্গনে পড়াশোনা করছে। এ কারণে মদিনা ভার্সিটি সম্পর্কে প্রবাদ হিসাবে আরবিতে বলা হয় “الجامعة التي لا تغيب عنها الشمس”
সাধারণত, ভার্সিটি নাম শুনলে আমাদের সামনে জাগতিক শিক্ষার বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু এখানে শিক্ষায় আধুনিক সকল প্রযুক্তি ব্যবহার ও মডিফাই করে শিক্ষার জাগতিক পদ্ধতিকে ইসলামাইস্ট করে কুরআন-সুন্নাহ তথা দীনী শিক্ষা প্রদান করছে। তাবৎ বিশ্বের প্রযুক্তির উপর খালেছ দীনী শিক্ষার পঠন-পাঠন, প্রচার ও প্রসার ইখলাসের সাথে অব্যাহত রাখছে। ভবিষ্যতে আরো সমৃদ্ধ ও সমাদৃত হবে, ইনশাআল্লাহ।
যেহুতু শিক্ষা-পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর আদলে পরিচালিত সেহেতু এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য ইন্টারমেডিয়েট (HSC) বা এর সমমানের (আলীমের সার্টিফিকেট /A লেভেল ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে ইংরেজি মাধ্যম কোর্স) হওয়া অবশ্যক। এটা প্রাথমিক শর্ত তথা আবেদন প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম ধাপ।
এ শর্তের দরূন আমাদের দেশের কওমি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপণকারী ছাত্র ভাইয়েরা মদিনার মত একটি দীনী প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করার প্রাথমিক যোগ্যতার ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হতে পারে না। এর ফলে আবেদন করতেও পারছেন না।
কিন্তু যে সকল প্রতিষ্ঠানের সনদ সরকারিভাবে ইন্টারমেডিয়েটের সমমান নয় সে ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাথে মদিনা ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ মু’আদালা বা উচ্চশিক্ষায় আবেদনের সুযোগ লাভের চুক্তি করে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ একাডেমিক সনদকে ইন্টারমেডিয়েট বিবেচনা করে সে সনদ দিয়ে আবেদন করার সুয়োগ দেয়।অর্থাৎ, মু’আদালাকৃত সনদ দিয়ে ভর্তি আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার পর ভার্সিটির কর্তৃপক্ষ তাদের যথাবিহিত নিয়মানুসারে আবেদন গ্রহন করে বা করে না।
বছর কয়েক আগে কওমির শিক্ষার্থীদের আলিয়া মাদরাসা থেকে পরীক্ষা দেওয়া সহজ ছিল। সরাসরি দাখিল তারপর আলিম পরীক্ষা দেওয়া যেত। কিন্তু এখন ফাইভ (JDC) থেকে পরিক্ষা দিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলীম পরিক্ষা দিতে হয়। যা একজন কওমি মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য শুধু কঠিন না বরং, প্রায় অসম্ভব পর্যায়ের।ক্ষেত্র বিশেষ, একই সাথে দুই নৌকায় পা রাখার নামন্তর।
আমাদের দেশে প্রায় দু’হাজারের মতো (মাদরাসার সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই) দাওরায়ে হাদীস পর্যারের মাদরাসা আছে। সেখান থেকে যদি কিছু মাদরাসা যদি মু’আদালা করার উদ্যোগ নেন, তাহলে কওমি মাদরাসা পড়ুয়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণ প্রত্যাশী ভাইদের জন্য বিরাট দ্বার উম্মুক্ত হতো।
আমার জানা মতে, চট্রগ্রামের দারুর মা’আরিফ-এর সাথে মদিনা বিশ্ববিদ্যালযেল সঙ্গে মু’আদালা আছে। এছাড়া অতি সম্প্রতি, আরো দু’একটি মাদরাসা মু’আদালার চেষ্টা করছে।
ভার্সিটির রেজিস্টার ভবন ( عمادة القبول و التسجيل) এ সংক্রান্ত স্বতন্ত্র একটি বিভাগ আছে এবং তারা প্রত্যাহিক নিয়মিত কাজ করে। বিভিন্ন দেশের বহু প্রতিষ্ঠান মু’আদালা করেছে এবং প্রতিনিয়ত বহু মাদরাসা/দীনী প্রতিষ্ঠান মু’আদালা করার চেষ্টা করছে।
আমাদের দেশের আহলে হাদীসপন্থীদেরও অনেকগুলো মাদরাসা মদিনার সাথে মু’আদালা করা আছে এবং সে সকল প্রতিষ্ঠানের সনদ দিয়ে তারা এসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
সৌদি সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সারা বিশ্বে দীনের প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে ১৩৮১ হিজরী সনে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা করে এবং এই দীনী প্রতিষ্ঠানের কারিকুলামসহ প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা দানের জন্য তের সদস্য বিশিষ্ট একটি পর্যদের সম্বন্নয়ে মিটিং হয়েছিল। সেখানে মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা আবুল হাসান আলী নদবী রহিমাহুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। তাদের পরামর্শের ফসল আজকের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়।
তাহলে কেন আমরা মু’আদালা করার জন্য চেষ্টা করবো না!
এখানে ভর্তি হতে পারলে মসজিদে নববীর বিশাল ইলমি ভাণ্ডার থেকে ও আরবদের বিজ্ঞ বিজ্ঞ আলেমদের থেকে জ্ঞান আহরণের সুবর্ণ সুযোগও অতি সহজেই থাকে।
নিচের ওয়েবলিংক থেকে মু’আদালা করার আবেদন সংগ্রহ করা যাবে। আট পৃষ্ঠার এ আবেদন পত্রের একেবারে সর্বশেষ পৃষ্ঠায় মু’আদালা করার জন্য ষোলটি তথ্য চাওয়া হয়েছে।
যদিও তথ্যগুলো সংগ্রহ ও বিন্যস্থ করতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু হিম্মত করলে সহজ হয়ে যাবে।
প্রত্যাশিত তথ্য সংগ্রহ করে পুরা ফাইল স্ক্যান করে আবেদনের শেষ পৃষ্ঠায় প্রদত্ত ইমেইলে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। কিংবা আপনি নিজে/কারো মাধ্যমে সরাসরি মু’আদালার অফিসে আবেদন জমা দিতে পারবেন।
প্রাথমিক যাচাই করে ভার্সিটির একটি প্রতিনিধি দল আবেদনকৃত মাদরাসা সরজমিনে পরিদর্শন করে মু’আদালা চূড়ান্ত করবে।
মু’আদালা আবেদনের ওয়েবলিংক:
https://drive.google.com/file/d/1gGwfRydFSXerC6rERlxRuQfdv8eBU-Qc/view?usp=drivesdk
লেখক: শিক্ষার্থী, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়