মিয়ানমার সেনাবাহিনী অপরাধ করেও দোষ চাপিয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর

Amnestyরোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ এক তদন্ত প্রতিবেদনে নিজেদের দায়দায়িত্ব অস্বীকার করে উল্টো রোহিঙ্গাদের ওপর দোষ চাপানোর ঘটনাকে ‘চোখে ধুলো দেওয়া’র প্রচেষ্টা মনে করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে  রাখাইনে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ-যৌন নিপীড়ন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও প্রকাশিত সেনা-তদন্ত প্রতিবেদনে তা অস্বীকার করা হয়েছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংকটের কারণ হিসেবে দেশটির সেনাবাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী করলেও প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে সেনাবাহিনী উল্টো দোষ চাপিয়েছে ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’দের ওপর। সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় আড়াল করতে তাদের বাঙালি সন্ত্রাসী নামে ডাকে মিয়ানমার। সেনা-তদন্ত প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এতে বাঙালি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, ওই বাঙালি সন্ত্রাসীদের কারণেই রাখাইনে বসবাসকারী মানুষেরা দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অ্যামনেস্টি বলছে, এটি আসলে চোখে ধুলো দেওয়ার (হোয়াইট ওয়াশ) চেষ্টা।২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর সামরিক অভিযান জোরদার করে মিয়ানমার। তখন থেকেই রাখাইনে প্রবেশাধিকার নেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংবাদমাধ্যমের। সে কারণে সেখানকার চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিবিসিসহ বেশ কিছু সাংবাদিককে সঙ্গে করে ওই এলাকা ঘুরে দেখিয়েছে মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা। বিবিসির দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদদাতা জোনাথন হেড জানিয়েছেন, তিনি নিজেই রাখাইনের বৌদ্ধদের রোহিঙ্গাদের গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিতে দেখেছেন। সে সময় সেখানে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী উপস্থিত ছিল। অ্যামনেস্টি সত্য অনুসন্ধানে জাতিসংঘের অনুসন্ধানকারীদের ওই এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।২৫ আগস্ট সেনা অভিযান জোরদার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এর আগে গত অক্টোবর থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার এবং আশির দশক থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  আরও প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। সব মিলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশে।  জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। এবার অভ্যন্তরীণ সেনা তদন্ত প্রতিবেদনেও একইভাবে সব দায়িত্ব অস্বীকার করা হলো। অ্যামনেস্টির একজন মুখপাত্র প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে সেনাবাহিনী দায় স্বীকার করবে না। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button