তুর্কী প্রতিরক্ষা শিল্পে আগ্রহ বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর

turkeyতুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রতি বিপুল আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের নেতারা। সম্প্রতি আঙ্কারা সফরে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি টার্কিশ এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিস (টিএআই)’র তৈরি টি-১২৯ এ্যাটাক হেলিপ্টারের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নেও অংশ নিয়েছেন। পাকিস্তান এখন তার পুরনো বেল এএইচ-১এফ ও এএইচ-১এস কোবরা হেলিকপ্টার বহর বদলে ফেলতে তুরস্ক থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে ৩০টি টি-১২৯ কেনার পরিকল্পনা করেছে। টিএআই থেকে পাকিস্তান এরোনটিক্যাল কমপ্লেক্স (পিএসি)-এ প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে এসব এ্যাটাক হেলিকপ্টার তৈরি করা হবে। পাকিস্তান চুক্তিটি অনুমোদন করলে তা হবে তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় অংকের একক চুক্তি। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এই চুক্তি সইয়ের আশা করা হচ্ছে। টিএআই’র তৈরি হারকুশ প্রশিক্ষণ বিমান ও আনকা ড্রোন কেনারও আগ্রহ দেখিয়েছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিরক্ষা শিল্পের বাজার অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তুরস্কের নজর শুধু পাকিস্তানে সীমাবদ্ধ নেই। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ওপরও তারা নজর দিয়েছে। ব্যাংককে ৬-৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা মেলাতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো অংশ নেয়। সেখানে তারা টি-১২৯ হেলিকপ্টার, এমআইএলজিইএম-শ্রেণির করভেটি ওয়্যারশিপ, সশস্ত্র ও নিরস্ত্র ড্রোন, হারকুশ প্রশিক্ষণ বিমান এবং অস্ত্রসজ্জিত সাঁজোয়া যান উপস্থাপন করে। পাশাপাশি দেশটি তার উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা, রকেট ও মিসাইল, সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নাইট এন্ড থার্মাল অবজারভেশন সিস্টেম, রাডার, স্মার্ট মিউনিশন ও আর্টিলারি হাডওয়্যারের প্রতি ক্রেতাদের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।
সন্ত্রাসদমনের ব্যাপরে তুরস্কের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর জানা আছে। তুরস্কের স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র ও ব্যবস্থা সহিংস ননস্টেট এ্যাক্টরদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসদমন ও বিদ্রোহদমনমূলক অপারেশন চালানোর পক্ষে বেশ কার্যকর। বিশেষ করে পেতে রাখা বোমা সনাক্ত ও নিষ্ক্রীয় করার জন্য তুরস্কের তৈরি ডিভাইসগুলোর ব্যাপারে এসব দেশের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
বিদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বাজারজাতকরণে সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক যে সাফল্য পেয়েছে তাতেও আঙ্কারা বেশ খুশি। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ আরদা মেভলুতোগলু তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্পের রফতানি প্রবৃদ্ধির দিকটি সামনে নিয়ে আসেন। এই শিল্প যেসব চুক্তি করছে তার ৫০-৬০ শতাংশই বিদেশের সঙ্গে।
এশিয়া-প্রশান্তমহাগরীয় অঞ্চলে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের উপস্থিতি বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কার্যকারণ তুলে ধরেন মেভলুতোগলু। প্রথমত: এই অঞ্চলের অনেক দেশের সঙ্গে তুরস্কের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মিল রয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ও আস্থা অনেক পুরনো। দ্বিতীয়ত: এশিয়ার অনেক দেশের উচ্চাভিলাষী আঞ্চলিক লক্ষ্য রয়েছে। তারা তাদের প্রতিরক্ষাবাহিনীর সামর্থ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহী। তারা অত্যাধুনিক, উচ্চমানের সামরিক সরঞ্জাম পেতে চাইলেও এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সুতার সংযোগ থাকুক তা চায় না।
তাই ওইসব দেশের জন্য আদর্শ উৎসে পরিণত হচ্ছে তুরস্ক। দেশটি ন্যাটোরও সদস্য। এর মানে হলো তুরস্কের অস্ত্রের মান, প্রস্তুত প্রণালী, প্রশিক্ষণ, ডকট্রিন ও অপারেশন উন্নত।
মেভলুতোগলু বলেন, ‘তুরস্কের সেনাবাহিনী বহুসংখ্যক সংঘাত ও অভিযানে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এসব অভিযানের অনেকগুলোর প্রেক্ষাপট ন্যাটো ও জাতিসংঘ।’ দক্ষিণ এশিয়ার অস্ত্র বাজারে প্রবেশের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরাইল লড়াই করলেও তুরস্কের সুবিধা হলো এর পুরো প্রতিরক্ষা শিল্প ন্যাটো মানদ-ের অনুবর্তী। তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিয়েছে আরেকটি ফ্যাক্টর: তুরস্কের কোম্পানিগুলো প্রযুক্তি স্থানান্তর ও যৌথউদ্যোগে উৎপাদনে আগ্রহী। তুর্কি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহজে চুক্তি করা যায় বলেও দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশ এর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button