বাংলাদেশের প্রতি জার্মানি, সুইডেন ও ইইউ’র সমর্থন
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছে জার্মানি, সুইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠককালে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গট ওয়ালস্টর্ম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি।
এসময় তারা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বৈঠকের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, তারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন— ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা আপনার (শেখ হাসিনা) প্রজ্ঞা ও মানবিক উদ্যোগের প্রতি সম্মান জানাই।’
অতিথিদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি উল্লেখ করেন, দীর্ঘসময় ধরে তাদের (আশ্রিত মিয়ানমারের নাগরিকদের) আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের জন্য একটি সমস্যা।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের বন্দোবস্ত করেছে তার সরকার।
শেখ হাসিনার মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নবজাতক জন্মদানের বিষয়টিই এখন বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি। তার ভাষ্য, ‘তাদের (মিয়ানমার) নাগরিকদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘জার্মান ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।’
বৈঠকে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, ‘মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় আসেম বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে স্বদেশে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গট ওয়ালস্টর্ম। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নিতে সে দেশের সরকারকে উৎসাহিত করতে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। তার কথায়, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিশ্ববাসী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির আরও বাস্তবসম্মত ভূমিকা প্রত্যাশা করে।’
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের নিরাপদে ও মর্যাদা নিশ্চিত করে মিয়ানমারে পুনর্বাসনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানের বিষয়টিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত পোষণ করেন সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ও সুইডেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম। -পার্স টুডে