ডিজিটালাইজেশনে পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো
সরকারী বেসরকারি সবগুলো ব্যাংকের মধ্যে সবদিক বিবেচনায় সবচেয়ে বড় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকের শাখা সংখ্যা এক হাজার ২০৯টি। এর বাইরে বিদেশেও রয়েছে দুটি শাখা। এসব শাখায় প্রায় দেড় কোটি গ্রাহক রয়েছে। যেসব জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিস নেই সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে কাজও করে দেয় সোনালী ব্যাংক। এসব কারণে এ ব্যাংকের গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে এ ব্যাংকটি ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে। একই অবস্থা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোরও। এমনকি কয়েকটির অবস্থা খুবই খারাপ। ডিজিটালাইজেশনে ক্ষেত্রে দেশ যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের মৌলিক চাহিদা যেমন- ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মতো আধুনিক সেবাগুলো থেকে এসব ব্যাংকের গ্রাহকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রা ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো। তবে দেশের ক্রেডিট কার্ডের মাত্র শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর। আর ডেবিট কার্ডের এক দশমিক ৫৩ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ইন্টারনেট ব্যাংকিং শূন্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, প্রি-পেইড কার্ড ছাড়া এখন ব্যাংকিং চিন্তাই করা যায় না। আর হালে ইন্টারনেট ব্যাংকিংও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই ব্যাংকিং করা যায়। কেনাকাটা করতেও ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জুড়ি নেই। তাই বর্তমানে ব্যাংকিংয়ে এসব অনুষজ্ঞ না থাকলে ব্যাংকিং অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলো কোর ব্যাংকিং সলিউশনের (সিবিএস) আওতায় ছিল না। দক্ষ জনবলের সংকট ও যথোপযুক্ত সক্ষমতার অভাবে ব্যাংকের গ্রাহকদের এখনো পুরোপুরি আধুনিক ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের আইটি খাতের সিংহভাগ বিনিয়োগ সিবিএসের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ সিবিএস কার্যক্রম শেষে আধুনিক গ্রাহক সেবা দেওয়া হবে। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খারাপ অবস্থার মধ্যে সোনালী ব্যাংকই এখন পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড সেবায় এগিয়ে রয়েছে।
হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই শেষে দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৪৩ হাজার ২১৫। এর মধ্যে ৯ লাখ ৪০ হাজার ১৯০টিই দেশের বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর। রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে কেবল সোনালী ও জনতা ব্যাংকের গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড সেবা পেলেও তা খুবই সীমিত পরিসরে। এ দুটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা মাত্র তিন হাজার ২৫টি। সে হিসাবে দেশের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের মাত্র শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। গত জুলাইয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে মাত্র চার কোটি টাকা। অথচ ওই মাসে ক্রেডিট কার্ডে মোট লেনদেন ছিল ৮৮৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকিং সেবার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান ডেবিট কার্ড। জুলাই শেষে দেশে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৭। এর মধ্যে এক কোটি ৮ লাখ ১৭ হাজার ৭২২টি ডেবিট কার্ডই দেশের বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর। রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের ডেবিট কার্ড রয়েছে মাত্র ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫৫টি। এ হিসাবে দেশের ব্যাংকিং খাতে ডেবিট কার্ড সেবার মাত্র এক দশমিক ৫৩ শতাংশ রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর।
কার্ড সংখ্যায় পিছিয়ে থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা ডেবিট কার্ড ব্যবহারেও পিছিয়ে রয়েছে। গত জুনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ডেবিট কার্ড গ্রাহকরা এটিএম বুথ, পিওএস মেশিন ও ই-কমার্সের মাধ্যমে মাত্র ৯৯ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। অথচ ওই মাসে দেশের ব্যাংকগুলোর ডেবিট কার্ডে মোট লেনদেন ছিল ৮ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে মোট লেনদেনের মাত্র এক শতাংশ।
দেশের ব্যাংকগুলোর প্রি-পেইড কার্ড গ্রাহক রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪২২ জন। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রি-পেইড কার্ড গ্রাহকের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ৩০৬, যা এ সেবার মোট গ্রাহকের মাত্র এক দশমিক ৫৮ শতাংশ।