কবি ইকবাল ও তার সাহিত্য চিন্তা

iqbalইবরাহিম রহমান: “জনগণের শাসন ভার হাতে লওয়ার দিন দ্রুত এগিয়ে আসছে, পুরাতন ইমারত যেখানে দেখবে চুরমার করে দাও। সে ক্ষেত থেকে চাষির রুটির সংস্থান হয় না, তার গমের প্রত্যেকটি দানা পুড়িয়ে দাও। মসজিদের ও মন্দিরের সব আলো ভালো করে নিভিয়ে দাও।
মর্মরের উপাসনাগারের উপর আমি আজ নাখোশ ও বেজার।” উপরের কবিতাংশগুলো আর কারও নয়, মহাকবি ইকবালের। কবি সর্বহারাদের, রিক্তদের বেদনায় ফরিয়াদ তুলেছেন।
আধুনিক ধর্মতন্ত্রবাদ বিশ্বময় যে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে, গণতন্ত্রের বেনামিতে ধনিক ও পুঁজিপতিদের শোষণ চালু করেছে, ইকবাল তা সম্যক উপলব্ধি ও অনুধাবণ করেছেন, তাই আক্ষেপ করেই উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন তার বিভিন্ন কবিতায়।
ইকবাল বলেছেন, “যাও, দুনিয়ার আমার গরীবদের জাগিয়ে দাও, আর ধনীর বালাখানার ভিত্তি ধরে নাড়া দাও।” ইকবালের সর্বোত্তম বিপ্লব সঙ্গীত হচ্ছে “ফেরেশতাদের প্রতি আল্লাহ্র হুকুম” গরীব-দুখীদের দুঃখ দুর্গমায় কবির মন যে বিগলিত সেকথাই স্থান পেয়েছে তাঁর লেখায়। কবি বলেছেন, “শোষণ-দৈত্য গণতন্ত্রের মুখোশ পরে নৃত্য আর তুমি তাকেই আযাদীর দূত ভেবে নিয়েছো।” ইকবালকে যারা প্রতিক্রিয়াশীল বলতে চান তাদের মুখে ছাই দিয়ে কবি এসব বিপ্লবী কথা উচ্চারণ করেন।
আপন জন্মভূমির প্রতি যার মমতা নেই, ইকবালের চোখে তার চেয়ে আর মহাপাপী নেই। দেশদ্রোহিতা কতো বড়ো পাপ, তার বর্ণনা দিয়েছেন ইকবাল “জাবিদনামায়” যেখানে তিনি বাংলার মীরজাফর ও দাক্ষিণাত্যের সাদিক খানের বিশেষ উল্লেখ করেছেন। এই দু’জনের নামোচ্চারণেই কবি উত্তেজনার অধীর হয়ে বলেছেন, ‘তারা আপন দেশের আপন ধর্মের ও বিশ্বমানবের মহাকালঙ্ক।
ইকবাল একটি মাত্র বরাতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাবধারা দৃষ্টিভঙ্গী ও পার্থব্য অতি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। তিনি বলেছেন: “প্রাচ্যে চিনেছে আল্লাহকে, দেখেনিকে চেয়ে এ-সংসার পশ্চিম বাঁধা সংস্কার ফাঁদে খোঁজ রাখেনি সে আল্লাহর।”
ইকবালের চিন্তাভাবনায় নাটশে ও বার্গসর ছাপ অনস্বীকার্য, কিন্তু জালালউদ্দিন রুমীই নিঃসন্দেহে তার মুর্শিদ কামন্ত্রগুরু। মহা কবি দান্তের যেমন ভার্জিলে, তার চেয়েও বেশি ছিলেনর রুমী ইকবালের।
‘আমরারে খুদী’ ও ‘রুমুষ-ই-বেখুদী’র ভাষা, ছন্দ ও বর্ণনা ভঙ্গী হুবহু রুমীর মসনবীর ছাঁচে ঢালা। খুদীর তত্ব বিশ্লেষণে, সসীম আত্মার সঙ্গে অসীম আত্মার নিগূঢ় সম্বন্ধ অবধারণে, মদৈ কামেল বা কামেল মানুষের স্বরূপ নির্ধারণে, ইশক বা প্রেমের তথ্য বিশ্লেষণে এবং অমরত্ব লাভের শ্রেষ্ঠ পথ নির্দেশে ইকবাল ‘মন্ত্রগুরু রুমীর একজন অনুসারী। ‘পায়াম-ই-মাশরিক’ কাব্যে রুমী স্বর্গরাজ্যে গ্যাটের সঙ্গে আলাপ করেছেন, ‘জাবিদনামায়’ রুমী ইকবালকে স্বর্গে ও বিভিন্ন গ্রহলোকে পথ প্রদর্শন করছেন, সেসব জায়গায় অমর বাসিন্দাদের সঙ্গে পরিচিত করছেন, তত্বময় বর্ণনা দিচ্ছেন। বস্তুত, ইকবালের চিন্তা ভাবনায় ও কাব্যে সাহিত্যে রুমী অপরিহার্য মংপলদূত যাঁর অংগুলি নির্দেশে ইকবার মানস আবর্তিত বিবর্তিত হয়েছে, নিয়ন্ত্রিত ও বিকশিত হয়েছে। ইকবাল নিজেই ‘আসবারে খুদীতে বলেছেন, “রুমীর প্রতিভা দীপ্তি উদ্দীপিত করেছে আমারে পতঙ্গের মতো মোরে গ্রাম করিয়াছে তার দীপ্ত অগ্নিশিখা, আমার পেয়ালা পূর্ণ করিয়াছে কানায় কানায় স্বর্ণ মহিমায় মোর মৃত্তিকারে ফেরায়েছে রুমী প্রজ্বলিত অগ্নিকুন্ড করেছে সে মোরে বিভূতিরে। দীওয়ানা মাতাল আমি মত্ত তাঁর সুরের সুরায় জীবন সঞ্চয় করি তাঁর বাণী মূলে।”
এক কথায় ইকবাল ছিলেন রুমীর আধুনিকতম ভাষ্যকার। আত্মবিনাশ না করে আত্মবিশ্বাসের দ্বারা ‘খুদীর’ বিকাশ সম্ভব এবং ‘ইনসানে কামেল’ যিনি আল্লাহর নিকটতম সান্নিধ্য লাভ করেছেন। কবির ‘আসরার-ই-খুদী’ ও রামুস-ই বেখুদী’ জীবন দর্শনের ভাষ্য। আসরার-ই-খুদীতে তিনি প্লেটোনিক দর্শনকে অস্বীকার করেছেন, কারণ প্লেটো পুরাতন মেষদলের নেতা’ যার শিক্ষা উদ্যমশীল জীবনকে গতিশীল দর্শন থেকে শুধু চিন্তাশ্রয়ী নিষ্ক্রিয়তা ও পুঃখবাদী নির্বোধ অদৃষ্টবাদের পথে ঠেলে দেয়।
এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, ইকবাল রুমীর দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েননি, স্বকীয়তা প্রকাশে ইকবাল প্রতিভা দীপ্ত ও সমুজ্জ্বল।
সূফীশ্রেষ্ঠ হাফিজকে নিয়ে তিনি অনেক কাজ করেছেন। হাফিজকে নিয়ে অবশেষে হতাশা ব্যক্ত করে হাফিজের মোহ থেকে মুসলিমদের সাবধান করেছেন। মুসলিমদের সাবধান করে ইকবার বলেন, “সাবধান হাফিজ থেকে, সে শরাব বিলায় তার সুরাভরা পাত্র দূরে টেনে ফেলে দাও,  কারণ তাতে তিনি কেবল বিষ ঢেলেছেন।”
পশ্চিমা বস্তুবাদী সমাজ ও জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি এই অভিশপ্ত জাতীয়তাবাদ রূপী দানবের মৃত্যুবান স্বরূপ আখ্যায়িত করে কবি ইসলামী মিল্লারাতের আদর্শ তুলে ধরেন সেখানে নিখিল মানুষের থাকবে সমানাধিকার, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধনে বিশ্বমানব এক মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত হবে ভৌগোলিক ও ভ্রাতৃত্বের অটুট ভিত্তিতে জাতি বিশেষক স্বাদেশিকর্তার অন্ধপূজা থাকবে না। কবি বলেন : “আমাদের অন্তর হিন্দ বা তুর্ক বা নামের মধ্যে আবদ্ধ নয়, ইসলাম ব্যতীত অন্য কোথাও তার জন্ম ভ’মি নাই। আমাদের নবী জন্মভূমি থেকেই হিজরত তার অন্তর্দৃষ্টি এক নিখিল বিশ্বময় মিল্লাত করেছিলেন, এক কলেমার ভিত্তিতেই তা সুপ্রতিষ্ঠিত হলো। সৃষ্টি করলো এই দীনের সুলতানের অনুগ্রহে সারা বিশ্ব আমাদের মসজিদে পরিণত হয়ে গেলো। কবি বলেন ইসলাম জগতে আমাদের একটা বিশ্বজনীন রাষ্ট্রনীতি আছে, তার মূলনীতিগুলোকে প্রত্যাদিষ্ট হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি। আজ ও ভৌগোলিক সীমা রেখার বন্ধনকে ইসলামের প্রাণসঞ্জীবনী শক্তির প্রচ- আঘাতে চূর্ণ করার মহিমায় বিশ্বাস হারায়নি। মানুষের বা রাষ্ট্রের জীবন রূপায়ণে ধর্মের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং সবার উপরে যার অটুট বিশ্বাস এই যে, ইসলাম নিজেই একটা নিয়তি, নিয়তির বিপর্যয় ইসলাম কখনও সহ্য করবে না।
একটা বিশেষ জাতি বা ভূ-খন্ডের প্রতি অন্ধভক্তি ও বিশ্বাসের ফলে প্রকৃত মানবতা কতোখানি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তার ভয়াবহতা লক্ষ্য করে কবি রামুখ-ই-বেখুদীর বলেছেন :
“তারা ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিমূলকে ভেঙ্গে ফেলেছে,
জন্মভূমির ভিত্তিতে তারা মিল্লাত গড়েছে।
মানবতাকে তারা নস্যাৎ করে দিয়ে বিবদমান জাতি মানবতা তখন দুনিয়ার গল্প-কাহিনী হয়ে পড়লো, মানুষ মানুষের নিকট পর হয়ে গেল।’
ইউরোপে প্রবাসকালে তিনটি বিষয়ে ইকবালের মনীষাদীপ্তচিত্তে গভীর রেখাপাত করে; প্রথমত ইউরোপবাসীর অফুরন্ত জীবনীশক্তি, অভাবনীয় কর্মক্ষমতা, সীমাহীন অনুসন্ধিৎসা। দ্বিতীয় মানব জীবনের বিপুল সম্ভাবনা যার বাস্তব সাফল্য ইউরোপীয় জীবনে অহরহ দেখা দিচ্ছে অথচ প্রাচ্যখন্ডের লোকের যা কল্পনারও অতীত। তৃতীয়ত ইউরোপীয় এতসব সম্ভাবনা ও সফলতার মধ্যেও হৃদয়হীন হিংসা ও রক্তক্ষয়ী শ্রেণী সংগ্রামের তীব্র বিষ থাকায় তা মানবতার প্রকৃত কল্যাণমুখী হয়নি। তাদের পতনের বীজও তার মধ্যে লুকায়িত আছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারায় পুষ্ট এবং কুরআন হাদীসের একনিষ্ঠ অনুসারী কবি ইকবাল ইসলাম ধর্মীয় চিন্তাধারাকে নতুন রূপ দিতে চেষ্টা করলেন তার বিখ্যাত বক্তৃতাবলি এ।
মুসলিম জাতীয়তাবাদ: ইকবাল স্বদেশভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভাব পরিহার করে মুসলিম জাতীয়তাবাদের চিন্তাধারা ব্যক্ত করেন। এই মতবাদের সমর্থনে তিনি কুরআনে পাক থেকেই আহরণ করেন।
‘তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত  করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও: ৪৯: ১৩’।
কুরআনে পাক ইসলামে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য কোন জাতি বা গোত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার উল্লেখ করে না। উম্মত বা মিল্লাতে শামিল হওয়ার জন্যই আমন্ত্রণ জানায়। সুতরাং উম্মত বা মিল্লাত দ্বারা মানুষের এমন একটি জামা’ত বোঝায়, যার একতার ভিত্তি শুধু বিশ্বাস ও আকীদার মিল বোঝায়। তাতে বিভিন্ন কওম, গোত্র এবং জাতি শামিল হতে পারে। মিল্লাতে ইসলামিয়ার কোন পৈতৃক ভূমি নেই। প্রত্যেক দেশই তার দেশ, যেখানে মুসলমানরা ঈমানের ভিত্তিতে একত্রিত হয়ে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন ইকবালই প্রথম উত্থাপন করেন। ইউরোপে থাকাকালেই স্বদেশী জাতীয়তাবাদের বিশেষ করে আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের মোহ কাটিয়ে মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রগাঢ় বিশ্বাস জন্মে তার। সে বিশ্বাস তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বহাল থাকে।
স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র: ইকবাল তার কাব্য প্রতিভায় উপমহাদেশের  স্বাধীনতা সংগ্রামে অমূল্য অবদান রাখেন। কবিতার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের মাঝে তিনি তার বিশ্বনন্দিত খুদী দর্শন দ্বারা আত্মসচেতনতা বোধ জাগ্রত করেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য উপমহাদেশের শিক্ষিত যুবক মাত্রই পথ নির্দেশনার অন্বেষায় উন্মুখ ছিল।
ভৌগোলিক দিক দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশটি একই প্রাকৃতিক ভূখন্ডে অবস্থিত। রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রামও একই জাতির ভিত্তিতে হওয়ার কথা। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় তাই দাবি করে আসছিল। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি স্থাপনের কথা শোনা যেত। ইকবালই প্রথম ব্যক্তি, যিনি শুরু থেকেই মুসলিমদের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য কুরআন ভিত্তিক রাজনৈতিক দর্শন দিয়েছেন। স্বদেশ ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে মুসলিম জাতীয়তাবাদের ধারণা পেশ করেছেন। এ জন্য তিনি দেশে-বিদেশে সমালোচনার শিকারও হয়েছেন। ইকবালের বিশেষত্ব ও মহত্ব এখানেই। আর এ জন্য উপমহাদেশীয় মুসলিম রাজনীতিতে তার নাম শীর্ষস্থানে।
ইকবাল জীবনে দু’টি লোক: শিয়ালকোটের একজন সাধারণ ব্যবসায়ী শেখ নূর মোহাম্মদের সন্তান ইকবাল একটি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টাই নন, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কবিও রাজনীতিবিদ হতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন যুগস্রষ্টা। দু’জন মানুষ ইকবালের জীবন গঠনে প্রভাব বিস্তার তথা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। একজন ছিলেন তার কৈশোরে স্কুল জীবনের শিক্ষক মীর হাসান, যিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীসহ ইসলামী চিন্তাবিদদের দীক্ষায় দীক্ষিত হতে সাহায্য করেছেন। লাহোরের সরকারী কলেজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে লাহোরের ওরিয়েন্টাল কলেজে অধ্যাপনা করার সময় বিখ্যাত প্রাচ্য তত্ববিদ পন্ডিত টমাস আরনল্ডের সঙ্গে ইকবালের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। মীর হাসানের প্রভাবে ইকবাল যেমন একদিকে ইসলামের অতীত ঐতিহ্য বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। সেই রকম টমাস আরনল্ডের সাহায্যে পাশ্চাত্য চিন্তাধারার মহৎ দিকটার সঙ্গে পরিচিত হন। টমাস আরনল্ডের উৎসাহেই ইকবাল ৯০৫ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডন গমন করেন। তিনি জার্মানিতে ডক্টরেট ও লন্ডনে বার এটল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। ইকবাল ছিলেন প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বিত পন্ডিত। তিনি একদিকে আরবি, ফার্সি, উর্দু অপরদিকে ইংলিশ ও জার্মান ভাষার পন্ডিত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button