সোমবার পর্দা উঠছে ব্রিটিশ ক্যারি অ্যাওয়ার্ড’র
এনাম চৌধুরী: প্রস্তুতি শেষ, এখন শুধু অপেক্ষার পালা, সময় ঘনিয়ে আসছে, ২৭ নভেম্বর ব্রিটেনের ক্যারি ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসের সবচেয়ে ঝমকালো, বর্ণাঢ্য এবং বৃহৎ আয়োজন ব্রিটিশ ক্যারি অ্যাওয়ার্ড এর পর্দা উঠবে। আয়োজনের যুগপূর্তি হয়েছে গত বছর। এবার তেরো বছরে পদার্পন করলো এনাম আলী এমবিই’র ব্রিটিশ ক্যারি অ্যাওয়ার্ড।
আয়োজনে আভিজাত্য এবং বর্ণিলতার যেমন কমতি থাকেনা তেমনি কমতি থাকেনা উপভোগ করার মতো পারফরমেন্সের। ইতোমধ্যে ব্রিটিশ ক্যারি অ্যাওয়ার্ড এ অতিথি হয়েছেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, বরিস জনসন থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত সেলিব্রেটিরা। অতিথি হয়ে ক্যারি অস্কার মঞ্চ প্রাণবন্ত করে গেছেন গর্ডন রামজির মতো সেলিব্রিটি শেফ।
বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে সেন্ট্রাল লন্ডনের বাটারসি পার্ক। আলো ঝলমল মনোমুগ্ধকরআয়োজনে টেমস্-এর তীর যেন পুরোপুরি হাতছানী দিয়ে ডাকছে ব্রিটেনের কারি শিল্পের ‘অস্কার’ খ্যাত অনুষ্ঠানে।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ক্যারিবিহীন একটি সপ্তাহ আজ কল্পনা করেনা কোনো বৃটিশ নাগরিক।’ তিনি তার বক্তৃতায় আরো বলেছিলেন, চিকেন টিক্কা মসল্লা আমাদের প্রিয় খাবার। যারা প্রতিদিন এ উন্নত খাবারপরিবেশন করেন তারা ‘সেরা ব্রিটিশ’। ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা যে সেরা কিছু করতে পারে তার উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে বৃটিশ “ক্যারি অ্যাওয়ার্ড”।
ব্রিটিশ অর্থনীতেতে বছরে প্রায় ফাইভ বিলিয়ন কর প্রদানকারী ক্যারিশিল্প এখন চরম সংকটের মধ্যে নিপতিত। দক্ষ স্টাফ সংকটের কারণে প্রতিদিন যখন একটির পর একটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হচ্ছে তখন পূর্ব পুরুষের শ্রম-ঘামে গড়ে তোলা শত বছরের স্বপ্নের বাতিঘর “রেস্টুরেন্ট” শিল্পের জন্য ব্রিটিশ ক্যারি অ্যাওয়ার্ড হতাশার মাঝে অনেকেই আলোর প্রতিবিম্ব দেখেন। যারা অ্যাওয়ার্ড পান কিংবা যারা পান না তারা সকলেই আনন্দ চিত্তে বলেন-দুঃসময়ে অন্তত কেউ উঁচু গলায় বলতে পারছে “আমরা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে অবদান রাখছি, আমাদের অধিকার গুলো যথার্থ ভাবে দিতে হবে।”
ব্রিটিশকারি অ্যাওয়ার্ড’র ফাউন্ডার এনাম আলী এমবিই’র সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানটিতে এবারও উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিখ্যাত সেলিব্রেটিরা। শিল্প, সহিত্য, মিডিয়া, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের পদচারণায় এবারও মুখরিত হয়ে উঠবে তেরোতম ক্যারি অস্কার আসর।
ব্রিটেন ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এবারওদু’হাজারের মত সৌভাগ্যবান অতিথি এবারের অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বমানের এ অনুষ্ঠানটি প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেনএনাম আলী এমবিই’র সুযোগ্য কন্যা জাস্টিন আলী। সংসার জীবনে পা দেয়া জাস্টিন এর সাথে গত দু’বছর বছর সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন এনাম আলীর যুগ্য উত্তরসূরী জেফরী আলী। চব্বিশ বছরেরটগবগে তরুণ জেফরী এগারোতম ব্রিটিশ কারিঅ্যাওয়ার্ডসের মাধ্যমে সরাসরি জনসম্মুখে আসেন। গত দু’বছর “ক্যারিঅস্কারে” জেফরীর প্রাণ জাগানিয়া বক্তব্য নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশদের বাঙালিদের জন্য ক্যারি শিল্পের উন্নত বিকাশে পিতা এনাম আলীর পরিচয় যেন বহন করে।
ব্রিটেনের মূলধরার সংস্কৃতি অঙ্গনের সেরা শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে এবারো মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। পাশাপাশি দেশ-মা ও মাটির শেখড়ে যে টানতাড়িত করে একজন এনাম আলীকে সেই বাংলাদেশেরশিল্পিত পরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস থাকবে অনুষ্ঠানে।
বৃটিশ শিক্ষামন্ত্রী নিকি মর্গান এর ভাষায় “কারি আজ বৃটিশ হাউজ হোলড ব্রান্ড। এটি আজ শুধু ব্রিটেনে নয়, পুরো বিশ্বেই রপ্তানী হচ্ছে। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে যোগান দিচ্ছে বিলিয়ন পাউন্ড। যা দিয়ে অর্থনীতি আরো সুদৃঢ়হচ্ছে।” নিকি মর্গানের এ সত্য উচ্চারণরণের সাহসী এক অভিযাত্রী এনাম আলী এমবিই কারী শিল্পকে বিশ্বময়পরিচিতি দিয়েছেন ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস এর মাধ্যমে।
কারি শিল্পের অস্কার খ্যাত ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস’র ফাউন্ডার এনাম আলী এমবিই বলেন,ব্রিটিনের ক্যারিশিল্প এখন গভীর সংকটে নিপতিত। শত বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা একটি বিশাল শিল্প তিলতিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমরা এ সংকট মোকাবেলা করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি সংকটে পড়া এই শিল্পের সাথে জড়িতদেড় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অনুপ্রেরণা দিয়ে শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখতে।
এনাম আলী বলেন, আমি দেখেছি “ব্রিটিশ ক্যারি অ্যাওয়ার্ড” এর অনুকরণে এখন অনেকেই এ শিল্পের সাথে জড়িতদের প্রমোট করছেন, এটা আমার ভালো লাগে। মনে হয় আমার পরিশ্রম বৃথা যাচ্ছে না। এনাম আলী এমবিই চলমান সংকট মোকাবেলায় ব্রিটিশ সরকারের কাছে ইতোমধ্যে একটি স্পেশাল প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, আমার বিশ্বাস ব্রিটিশ সরকার সেটা বিবেচনা করবে এবং ক্যারি ইন্ডাস্ট্রি’র সমস্যা নিরসনে সেটা সফল উদ্যোগ হিসেবে কাজ করবে।