ইস্ট লন্ডন মসজিদ আর্কাইভের উদ্বোধন করলেন লন্ডন মেয়র
শতবছরের পুরনো আড়াই লক্ষ ডকুমেন্টস সংরক্ষণের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো ইস্ট লন্ডন মসজিদ আর্কাইভ স্ট্ররুম। ২২ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় এই অর্কাইভের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন লন্ডন মেয়র সাদিক খান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই আর্কাইভ স্থাপনের মাধ্যমে আজ থেকে শত বছর আগে আমাদের পূর্ববর্তী বংশধর ইস্ট লন্ডন মসজিদ প্রতিষ্ঠায় যে অবদান রেখে গেছেন তা যুগযুগ ধরে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইস্ট এন্ডের মুসলমানদের অতীত অবদান ইসলামধর্মে বিশ্বাসী লন্ডনারদেরকে জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
মেয়র সাদিক খান বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী বংশধরেরা খুব কম বেতনে চাকরি করেও মসজিদ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। তাঁরা তাদের সন্তানদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দিয়েছেন। পাশাপাশি শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে তাদের খ্রিষ্টান ও ইহুদী প্রতিবেশীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে মিশতে হয়। তাদের এই অবদান আমাদের চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।
তিনি মসজিদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের এই উদ্যোগের জন্য ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের নেতৃবৃন্দ, ভলন্টিয়ারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সভায় গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, ফটো তুলি, চিঠি লিখি কিন্তু কিছুক্ষণপরই তা ভুলে যাই। ইস্ট লন্ডন মসজিদ সেগুলো সংরক্ষনের ব্যবস্থা করেছে। এটা আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্ববহন করে।
তিনি বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদ ইউরোপের মধ্যে একটি বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে এখানকার মানুষ পরিশ্রমী। আমি আশাবাদী, ইস্ট লন্ডন মসজিদ আর্কাইভ তাদের এই অর্জনের সাথে দেশের অন্যান্য মসজিদগুলোকেও সম্পৃক্ত করবে। এই উদ্যোগ অন্যদেরকে ভালো কিছু করা অনুপ্রেরণা যোগাবে।
তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করেন। মারিয়াম সেন্টারের তৃতীয়তলায় সেন্টারের ম্যানেজার সুফিয়া আলম এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস। বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল আর্কাইভস এর রিচার্স এন্ড কলেক্টশন ডিপার্টমেন্টের ডাইরেক্টর ড. ভেলারী জনসন, ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, লর্ড এগরোমন্ড ও ইস্ট লন্ডন মসজিদের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান সুলেমান জেটার পিতার বন্ধু টিআরএস এর প্রতিষ্ঠাতা ফারুক সতরওয়ালা।
ইস্ট লন্ডন মস্ক আর্কাইভ এন্ড ইটস স্ট্ররুম বিষয়ে প্রজেক্টারের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইস্ট লন্ডন মসজিদ আর্কাইভের আর্কাইভিস্ট ইলিস ম্যাকরেথি। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে অনুবাদসহ তেলাওয়াত করেন আল-মিজান স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ইদ্রিস বান্না। এরপর মেয়র সাদিক খান আর্কাইভ স্ট্ররুম প্লাকস উন্মোচন করেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস ইস্ট লন্ডন মসজিদের শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভ স্ট্ররুম স্থাপনকে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ইস্ট এন্ড ও এখানকার মুসলমানদের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষনের প্রয়োজন ছিলো।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ এই উদ্যোগটি গ্রহণ করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আশাবাদী, এই আর্কাইভের মাধ্যমে মসজিদ ও স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটির ইতিহাস ঐতিহ্য যুগযুগ ধরে সংরক্ষিত থাকবে।
ড. ভেলারী জনসন বলেন, রিলিয়াস আর্কাইভ ন্যাশনাল আর্কাইভকে সমৃদ্ধ করে থাকে। তাই আমরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্কাইভ প্রতিষ্ঠায় উদ্ধুদ্ধ করে থাকি। ইস্ট লন্ডন মস্ক আর্কাইভ যেমন মসজিদের শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে তেমনী স্থানীয় কমিউনিটিকেও তথ্য-উপাত্তের দিক থেকে সমৃদ্ধ করবে। তিনি বলেন, অন্যান্য মসজিদের জন্য ইস্ট লন্ডন মসজিদ আর্কাইভ একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এখান থেকে অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এই আর্কাইভ স্ট্ররুম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা ১৯১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইস্ট লন্ডন মসজিদের ১০৭ বছরের আড়াই লক্ষাধিক ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে পেরেছি। এসব ডকুমেন্টস আধুনিক বৃটিশ সমাজের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে প্রাথমিক সোর্স হিসেবে ভুমিকা রাখবে এবং বৃটেনে মুসলমানদের অভিবাসন প্রক্রিয়া, বিশেষকরে ইস্ট এন্ডের মুসলমানদের ইতিহাস সংরক্ষণ করবে।
এই স্ট্ররুম আগামী দিনে ইস্ট লন্ডন মসজিদের নতুন নতুন ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করবে। তিনি আর্কাইভ প্রতিষ্ঠায় প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর হুমায়ুন আনসারী, প্রফসর জন ওফ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল, টাওয়ার হ্যালেটস লোকাল হিস্ট্রি লাইব্রেরী এন্ড আর্কাইভস এর হ্যারিটেজ ম্যানেজার টামসিন বুকির আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।
জনাব হাবিবুর রহমান ১৯১০ সালে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৈয়দ আমির আলী, ইতিহাসবিদ প্রফেসর টি ডাব্লিউ আরনোলড, স্যার আর্নেস্ট হাউস্টন, স্যার জন উডহেড, আর্ল উইন্টারন, প্রখ্যাত কুরআন অনুবাদক আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী ও মুহাম্মদ মারমাডুকি পিকচলের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয় লন্ডন মুসলিম সেন্টারের প্রথম তলায়।
এতে বক্তব্য রাখেন বেথনাল গ্রীন ও বো আসনের এমপি রুশানারা আলী, ড. জামিল শরীফ, বিবিসি ও চ্যানেল ফোর এর রিলিজিয়াস প্রেগামের সাবেক প্রধান আকিল আহমদ ও ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিইও নজমুল হোসাইন।