বিটকয়েনের মূল্য ১০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে

bitcoinনোমান আহমদ: জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি (ভার্চুয়াল মুদ্রা) বিটকয়েনের বিনিময় মূল্য সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে ১ বিটকয়েনের মূল্য ১০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, গতকাল মঙ্গলবার লুক্সেমবার্গভিত্তিক ভার্চুয়াল মুর্দ্রা বিনিময়ের প্লাটফর্ম বিট স্ট্যাম্পসহ সকল সূচকে বিটকয়েনের এ নতুন মূল্য পরিলক্ষিত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই দামবৃদ্ধির হার প্রায় ১২৫৮%। ধারণা করা হচ্ছে, লেনদেনের বিভিন্ন সুবিধার কারণে গত এক এবছরে এই ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার ৩১৬ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। হঠাৎ করে এই বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে শুরু করেছেন নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
খবরে বলা হয়েছে, কিছু কিছু মার্কেটে বিটকয়েনের মূল্য ১০ হাজার ডলারকেও ছাড়িয়ে গেছে। যেমন- জিম্বাবুয়েতে গত সোমবার বিটকয়েন লেনদেন হয়েছে প্রতিটি ১৭ হাজার আটশ ৭৫ ডলারে। আর দক্ষিণ কোরিয়াতে এটি লেনদেন হচ্ছিল ১১ হাজার ডলারের বেশি মূল্যে।
এর আগে গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিটকয়েনের দাম বেড়ে ৯ হাজার ৭২১ ডলারে পৌঁছে, যা এক আউন্স স্বর্ণের সাত গুণ। বিটকয়েনের বাজার এখন আইবিএম, ম্যাকডোনাল্ড’স ও ডিজনিকে ছাড়িয়ে গেছে। মোট ১ কোটি ৬৭ লাখ বিটকয়েনের মূল্য এখন ১৬ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিসেম্বরে শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ (সিএমএ) বিটকয়েন ফিচার চালু করবে— এ ঘোষণায় ডিজিটাল কারেন্সির মূল্য বৃদ্ধি পায়। তবে তারা এও জানিয়েছেন যে, ফটকা বুদ্বুদটি (স্পেকুলেটিভ বাবল) যেকোনো সময় ফেটে যেতে পারে। গত ৩১ অক্টোবর সিএমএর ঘোষণার পর বিটকয়েনের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছর শেষ দিকে এর দর ছিল মাত্র ১ হাজার ডলারের কাছাকাছি।
উল্লেখ্য, বিটকয়েন হলো ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে বিটকয়েন এনক্রিপশন ও ব্লকচেইন ডাটাবেস ব্যবহার করার কারণে তহবিল স্থানান্তর করা সম্ভব হয় অনেক কম সময়ে মধ্যে। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করেন। পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেনের পরে বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার তা সুরক্ষিত থাকে। একবার লেনদেন হবার পরে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর একাউন্ট হালনাগাদ করে দেয়। বিটকয়েনে বিনিয়োগ নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটে অনেক বিভেদ থাকলেও দিনে দিনে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনভাবেই অনুসরণ করা যায় না। তাই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিটকয়েন ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বৈধ পণ্য লেনদেন ছাড়াও মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যবহার আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন।
সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়েন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এটি বিটকয়েনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনি ব্যাবহার ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডীয় সরকার বিটকয়েনের গ্রাহকদের নিবন্ধনের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে।
লেখক: পরিচালক, লন্ডন ভিত্তিক আইটি সেবা প্রতিষ্ঠান সাইন সফট লিমিটেড।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button