ব্রিটিশ কারী এ্যাওয়ার্ডসের ১৩ তম বর্ণাঢ্য আসর অনুষ্ঠিত
আব্দুল মুকিত অপি: চোখ ধাঁধাঁনো আয়োজন, বর্নিল আলোকছটা আর হাজার মানুষের প্রাণবন্ত উপস্থিতি নিয়ে সোমবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কারী শিল্পের অস্কারখ্যাত বৃটিশ কারী এ্যাওয়ার্ডসের ১৩ তম আসর।
টেমসপারের বাটারসী পার্কের বাটারসী ইভলুশনে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত অন্য এক জগতে যেন সময় কাটান অতিথিরা।
সুরমা পারের সন্তান এনাম আলী এমবিই তার যাদুমন্ত্রে এই অনুষ্ঠানকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। এটি এখন পৃথিবীজুড়ে কোন বাঙালির উদ্যোগে করা সবচে বড় আয়োজন।
অনুষ্ঠানে ছিল বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র শুভেচ্ছা বক্তব্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কামেরনের মূল্যায়ন, পুরস্কার বিতরণ, বাউল করিমের গান, আধুনিক নৃত্য ও অভিজাত নৈশভোজ।
জন প্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব রাগিহ ওমরের সাবলিল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে এনাম আলী পুত্র জাফরি আলী বলেন, এই অনুষ্ঠান আমাদের কারী শিল্পের একতার কণ্ঠস্বর। আমরা এই শিল্পের ইমেজ বাড়াতে এবং সংকট দূর করতে কাজ করে যাচ্ছি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র বক্তব্য পরদায় ভেসে ওঠে। তিনি বলেন, কারী শিল্প বৃটেনের জাতীয় ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। বৃটেনের কারী হাউসগুলো আজ খুবই জনপ্রিয় জায়গায় আছে। তিনি বিজয়িদের অভিনন্দন জানিয়ে বৃটিশ কারী এওয়ার্ডসের সাফল্য কামনা করেন।
ডেভিড ক্যামেরনের কথায় ছিল বাংলাদেশের প্রশংসা। তিনি বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ একটি শাইনিং দেশ। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, রপ্তানি ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে। তিনি বলেন, কারী আমাদের সংস্কৃতি এবং জীবন যাত্রায় নিয়মিত অবদান রাখছে। তিনি এওয়ার্ড বিজয়ি ও নমিনেশনপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান।
বৃটিশ কারী এওয়ার্ডসের প্রতিষ্ঠাতা ও আইওন টিভির চেয়ারম্যান এনাম আলী এমবিই তার বক্তব্যে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বৃটিশ কারী এওয়ার্ডসের লাখ লাখ শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি তার গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, কারী শিল্পের মর্যাদা বাড়াতে গত ১৩ বছর এই অনুষ্ঠান সন্জিবনী ভূমিকা রাখছে । আমরা আগামিতে এই শিল্পের উন্নয়নে সব চেষ্টাই করে যাবো।
এনাম আলী এমবিই বলেন, বৃটেনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কারী শিল্প অবদান রাখছে। এজন্য ভিসা ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। সংকটে পড়া এই শিল্পে এখন সপ্তাহে তিনটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হচ্ছে। আমরা কথা বলছি, দিল্লী থেকে ভিসা অফিস ঢাকায় নিয়ে আসতে। এবার আমরা অনেকটাই সফল। অনেকেই ভিসা পেয়েছেন এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৃটিশ পরিবহনমন্ত্রী ক্রিস গ্রেলিং, লিবডেমের প্রধান ভিন্স কেবল, ইউরো ফুডস ও কুকড-এর প্রধান সেলিম হোসেইন এমবিই। ভিন্স তার বক্তব্যে কারী শিল্প বাঁচাতে ভিন্দালু ভিসা চালুর প্রস্তাব করেন ।
নমিনেশন পাওয়া শতাধিক রেস্টুরেন্টের মধ্যে বিজয়ি হয়–মোম্বাই লাউন্জ (ডারহাম), সিনেমন ক্লাব (লন্ডন), কলোসি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট (চেলথেহাম), সাম্পান ব্রমলি (কেন্ট), সানাম তান্দুরি (স্কটল্যান্ড), দিসম কিংস ক্রস (লন্ডন), রসুই ইন্ডিয়ান কিচেন (সোয়ানসি), ভিকারয় (কার্লিসল), দাবাওয়াল জেসমন্ড (নিউক্যাসল), আশা’স ইন্ডিয়ান (বার্মিংহাম)। নমিনেশন পাওয়া ১১টি টেইকওয়ের মধ্যে বিজয়ি হয় দ্যা চিলি পিকল (ব্রাইটন)।
বিচারক প্যানেলে ৭জন বৃটিশ সাংবাদিক, সাবেক শেফ, ক্যাটারিং বিশেষজ্ঞ, ইভেন্ট কর্মকর্তা ছিলেন।
হাজার হাজার বিদেশি মানুষের ভিড়ে যখন সাইদা তানি গেয়ে ওঠেন– ‘আমার বন্ধুয়া বিহনেগো সহেনা পরাণেগো…কিংবা বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে…’ তখন আবেগের জলে চিকচিক করে অনেক বৃটিশ-বাঙালির চোখ।
একজন বাঙালির উদ্যোগে এমন নান্দনিক আয়োজনে উৎফুল্ল বিশিষ্ট কবি শামীম আজাদ বললেন– ‘এটি আমাদের আনন্দের একটা অংশ। এটাকে সহযোগিতা করা অত্যন্ত জরুরি।’
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এনাম আলী এমবিই আইওন টিভির কলাকুশলীদের মঞ্চে ঢেকে পরিচয় করিয়ে দেন।