ট্রাম্পের পশ্চাদপসরণ
ইসরাইলস্থ মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পশ্চাদপসরণ করলেন ট্রাম্প। অন্য প্রেসিডেন্টদের মতো সিদ্ধান্তটি আবারও ৬ মাসের জন্য স্থগিত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্রে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, আইন মেনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেননি তিনি। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি বিগত সরকারগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান সিদ্ধান্ত স্থগিতের খবরটি নিশ্চিত করেছে।
সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলো এ নিয়ে ট্রাম্পকে চাপ দেয়ার কারণে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন দূতাবাসকে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করতে ১৯৯৫ সালেই একটি আইন প্রণয়ন করে মার্কিন কংগ্রেস। তখন থেকে এ পর্যন্ত কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেননি। ওই আইনের বিধান অনুযায়ী, সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের সামগ্রিক ক্ষমতা মার্কিন প্রেসিডেন্টের। চাইলে তারা জাতীয় নিরাপত্তা ও অন্যান্য জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় প্রতি ৬ মাস পর পর স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। সেই ১৯৯৫ সাল থেকেই প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইনগত সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। ফলে তেল আবিবেই থেকে গেছে মার্কিন দূতাবাস। ট্রাম্পও দ্বিতীয়বারের মতো একই সিদ্ধান্ত নিলেন। এদিকে অপর এক খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল তেল আবিব থেকে সরিয়ে ইসরাইলের রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা। ক্ষমতায় বসার এক বছর না পেরোতেই সেই কাজে সক্রিয় হয়েছেন তিনি। বিবিসির খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে বেশ শঙ্কিত সউদী আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন সাংবাদিকদের কাছে।
জেরুজালেম ইস্যুতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরোঁ বলেছেন, ট্রাম্পের একতরফা সিদ্ধান্তে তিনি উদ্বিগ্ন। ইসরাইল ও ফিলিস্তিন- দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই জেরুজালেম বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। স্থানীয় সময় গত সোমবার সউদী আরবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাম্পের এ ধরনের পদক্ষেপ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্য শান্তি প্রতিার প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মার্কিনি এ সিদ্ধান্তে দুদেশের মধ্যে চলমান শান্তি প্রতিার প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আর জেরুজালেমে ইসরাইলের রাজধানী স্থানান্তর ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জর্ডান। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তুরস্কও।
এ বিষয়ে আরব লিগের প্রধান আবুল ঘেইত বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সহিংসতা ছড়াবে। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্তটি কিন্তু বেশ পুরোনো। ১৯৯৫ সালেই মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদিত এক আইনে ইসরাইলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে সাবেক সব প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য স্বাক্ষর করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর একই পথে হেঁটেছিলেন ট্রাম্পও। তবে এবার বেঁকে বসেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্থানীয় সময় গত সোমবার ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর বিলম্বের জন্য প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের শেষ দিন। আর এদিন স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে যেকোনো সময়ে ১৯৯৫ সালের ওই আইন বাস্তবায়ন হতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হোগ্যান গিডলে বলেন, শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে একেবারে পরিষ্কার। এটি বাস্তবায়ন হবে কি হবে না, সেটি নয়, বরং কখন হবে সেটিই বিষয়। ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরাইল। পরে ১৯৮০ সালে তারা পূর্ব জেরুজালেমকে অধিগ্রহণ করে নেয় এবং ইসরাইলের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই অঞ্চলকে দখলকৃত হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। বিবিসি জানায়, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে, তাহলে তা পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক পরিণতির দিকে ঠেলে দেবে। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে এ ব্যাপারে তাঁর কথা হয়েছে। গার্ডিয়ান জানায়, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করতে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাবেন। তার মুখপাত্র রবিবার বলেন, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন আব্বাস। মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর বা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার ফলে কী বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে, তা বিশ্বনেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন তিনি। হামাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ওয়াশিংটন যদি একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে কিংবা দূতাবাস স্থানান্তর করে, তাহলে নতুন করে ইন্তিফাদার সূচনা ঘটবে।