ক্ষোভে উত্তাল মুসলিম বিশ্ব
বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একতরফা স্বীকৃতি দেয়ায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো মুসলিম বিশ্ব। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে তারা মার্কিন পতাকায় আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করছে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা।
আর ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাসহ বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার দিনভর বিক্ষোভ করেছেন। ফিলিস্তিনের রামাল্লা শহরের আল-মানারা স্কয়ারে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে এবং পাথর নিক্ষেপ করে প্রতিবাদ জানান।
তারা একপর্যায়ে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ইসরাইলি বাহিনী বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতি টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়তে থাকে। এতে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হন। বিক্ষোভকারীদের দমনে মোতায়েন করা হয়েছে শত শত ইসরায়েলি সেনা।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি প্রত্যাহার করতে হবে, জেরুজালেম আমাদের জীবন, আমাদের জীবনকে তো আমরা ত্যাগ করতে পারি না, হয়ত তৃতীয় একটি ইন্তিফাদা (গণঅভ্যুত্থান) মুখোমুখি হচ্ছি আমরা।
অপরদিকে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের বাইরে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও সমস্ত মুসলিমকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, যেকোনো স্থানের মুসলিমদের এটা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে হবে যে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণার কড়া নিন্দা জানাচ্ছি।
আজ শুক্রবার বিক্ষোভে জ্বলে উঠে পুরো মুসলিম বিশ্ব। প্রতিবাদে বাংলাদেশেও আজ বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকে আজ জুমা বাদ সারা দেশে জেরুসালেম ইস্যুতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়েছে। মিছিলে ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীসহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ শরীক হয়েছেন।
শুক্রবার বাদ জুমা হেফাজত ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমের উত্তরগেটে সমাবেশ শুরু হয়। এতে ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
নামাজের পরপরই বায়তুল মোকাররমের আশপাশে বিপুল পরিমাণ মানুষকে জড়ো হতো দেখা যায়। তাদের কণ্ঠে ছিল ‘ট্রাম্পের ঘোষণা মানি না মানবনা’, জেরুজালেম ফিলিস্তিনের, ইসরায়েল নিপাত যাক’ ইত্যাদি স্লোগান।
শুধু মুসলিমরাই নন, সারা বিশ্বই ট্রাম্পের এ ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এ ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে আমি নীরব থাকতে পারি না।’ তিনি পবিত্র শহরটিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।
জেরুজালেম বিষয়ে কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি পাল্টে দেয়া ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্ররাও। ট্রাম্পের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধা। বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেও বলেছেন, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত শান্তি উদ্যোগের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে না। তিনি বলেন, জেরুজালেমে ইসরাইল ও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব থাকা উচিত।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জানান, তার দেশ জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেবে না। জেরুজালেমের মর্যাদা শুধু দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হতে পারে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, ইসরাইলে তার দেশের দূতাবাস তেল আবিবেই থাকবে। তার কথায় স্পষ্ট যে, কানাডা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ব্রিটেন, ফ্রান্স, সৌদি আরবও এ স্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্পের ঘোষণা নাকচ করেছে আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ।