নৃশংসতায় পিছিয়ে নেই সিরিয়ার বিদ্রোহীরা
ওরা সার বেঁধে দাঁড়িয়ে। হাঁটু মুড়ে মাটিতে মুখ গুঁজে থাকা সাত বন্দির দিকে বন্দুক তাক করে আছে ওরা। নতজানু বন্দিদের পরনে জামা নেই। পাঁচ জনের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। আতঙ্কে মুখে শুধু গোঙানির শব্দ। পিঠে গাঢ় লাল ক্ষত।
বন্দিরা সকলেই সিরিয়ার সরকারি সেনা। আর বন্দুকবাজরা বিদ্রোহী। চিৎকার করে বন্দিদের কবিতা শোনাচ্ছে বিদ্রোহীরা, ‘পঞ্চাশ বছর ধরে ওরা দুর্নীতির সঙ্গী। শপথ নিচ্ছি, আমরা বদলা নেব।’ কবিতা শুনতে চায় না বন্দি সেনা। তাই ময়লায় মুখ গুঁজে পড়ে আছে ওরা। কবিতা শেষ হতেই বিদ্রোহীদের কম্যান্ডারের গুলি প্রথম বন্দির মাথা ফুঁড়ে দিল। তার পরেই কম্যান্ডারের পথ অনুসরণ করল তার সঙ্গীরা। পায়ের নীচে পড়ে থাকা অন্য ছ’জন বন্দিকে এক এক করে গুলি করে মেরে ফেলল তারা। তার পরে লাশগুলো ছুড়ে ফেলে দিল কুয়োয়।
গত এপ্রিলের এই গোটা ঘটনাটি একটি ভিডিওয় ধরা পড়েছে। ভিডিওটির শেষে ঘাতকদের এক জন ক্যামেরার দিকে চেয়ে হাসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাক্তন এক বিদ্রোহীর মাধ্যমে এই ভিডিও কয়েক দিন আগেই পাচার হয়েছে সিরিয়া থেকে। বিদ্রোহীদের হিংসাত্মক কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সে পথ থেকে সরে এসেছেন এই ব্যক্তি। তাঁর কাছ থেকেই শুনতে পাওয়া গেল, সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের মধ্যে বেশ কিছু কট্টরপন্থী রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে গদিচ্যুত করার নামে তারা কখনও কখনও ভয়ঙ্কর নৃশংস এবং বীভৎস পন্থা নিচ্ছে।
আড়াই বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার বিরোধীদের একটা বড় অংশ আরব দুনিয়ারও সমর্থন পাচ্ছে। পশ্চিমী দেশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন তো রয়েইছে। কিন্তু এই কট্টরপন্থীদের নিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের মতো মাথাব্যথা রয়েছে আমেরিকারও। যে কারণে অনেক সময়েই দুই শিবির থেকে বলা হচ্ছে, এরা আল কায়দার মদতপুষ্ট। তাই সেনা অভিযানের কথা ভাবলেও আমেরিকা মনে করছে বিদ্রোহীদের আচরণে মৌলবাদীরাই উপকৃত হবে। অরাজকতা কখনই পিছু ছাড়বে না সিরিয়ার। ভিডিওর সেই বিদ্রোহী কম্যান্ডারের নাম আব্দুল সামাদ ইশা। উত্তর সিরিয়ায় যাকে ‘কাকা’ বলে ডাকা হয়। কারণ তার দুই ডেপুটি কম্যান্ডার তারই ভাইপো। তিনশো বিদ্রোহীর একটা দলের নেতৃত্ব দেয় কাকা।