রীতিমতো পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে বিটকয়েন
রীতিমতো পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে বিটকয়েন। প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙতে থাকা এ ক্রিপ্টোকারেন্সিটির দর ১৭ হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে। এর ফলে অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একে ‘ব্রেক ছাড়া ধাবমান ট্রেন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বাজারে মূল স্রোতধারায় এর প্রভাব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে। গত বৃহস্পতিবার এশিয়ার লেনদেন সময়ে ১৪ হাজার ডলারের নিচে থাকলেও একই দিনে ইউরোপে এটি ১৫ হাজার ডলার ছাড়ায়। এক সময় এটি সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৭৭৭ ডলারে পৌঁছলেও শুক্রবার ১৬ হাজার ৭০ ডলারে নেমে আসে বলে জানায় ব্লুমবার্গ। অথচ এর আগের দিনও বর্তমানে আইসক্রিম থেকে শুরু করে এক পাইন্ট বিয়ার কিনতে ব্যবহারোপযোগী বিটকয়েনের দাম ছিল ১২ হাজার ডলারের আশপাশে।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ান জানায়, লন্ডনের কিছু অঞ্চলে এ ভার্চুয়াল কারেন্সিটির ব্যবহার ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহেই চক্ষু চড়কগাছ করার মতো মূল্য শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি এ দর ছিল মাত্র ৭৫২ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ বিটকয়েন বিষয়ে সতর্ক করে বলেছে, এটি আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে এবং এর ফলে একটি বাবল সৃষ্টি হলে তা পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করতে পারে।
সিডনিভিত্তিক এএসআর ওয়েলথ অ্যাডভাইজরসের শ্যানে চানেল বলেন, মনে হচ্ছে বিটকয়েন এমন একটি ট্রেনের মতো ধাবমান, তার কোনো ব্রেক নেই। আরো প্রচুর সংখ্যক নতুন অংশগ্রহণকারী ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে যোগ দিচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, একবার এ উত্তেজনা প্রশমিত হলে, আমরা অবশ্যই কিছু সংশোধন দেখতে পাব। ওদিকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও বিটকয়েনবিষয়ক সতর্কতা জারি করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ভার্চুয়াল কারেন্সির সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক, আর্থিক, অপারেশনাল, আইনি এবং ভোক্তা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে সতর্ক করেছে। ভারতে অন্তত ১১টি অনলাইন প্লাটফর্মে ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী নিয়মিত বিটকয়েন লেনদেন করে বলে জানা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা এরই মধ্যে বিটকয়েনের এ অবিশ্বাস্য বৃদ্ধিকে অতীতের কিছু স্মরণীয় বাবলের সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেছেন। অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ইতিহাসে কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া ১৭ শতাব্দীর টিউলিপ ম্যানিয়া, গত শতাব্দীর ৯০ দশকে শুরু হওয়া ডটকম বাবল, যেটি ২০০০ সালে বিস্ফোরিত হয়, সেগুলোর সঙ্গে বিটকয়েনের তুলনা হচ্ছে। এছাড়া আন্ডারগ্রাউন্ড সিল্করুট ওয়েবসাইটে ক্রেতারা বিটকয়েন ব্যবহার করে নেশাদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে পারছেন, যা এ ভার্চুয়াল কারেন্সিটি নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।