ইউরোপ সামরিক জাদুঘর, আরবলীগ অখাদ্য এবং অন্যরা নীরব দর্শক
থমাস এল ফ্রিডমেন
সিরিয়া প্রশ্নে ওবামার দল যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে একথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । তবে স্বচ্ছতার প্রশ্নে এটি একটি জটিল সমস্যা । রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে অভিযোগ তুলে ওবামা সরকার সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিচ্ছে । সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক অভিযান দেশটির দীর্ঘদিনের সংকট নিরসনে সহায়ক হবে নাকি এ অভিযান পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে । কারণ সিরিয়ার ঘনিষ্ট মিত্র ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ সিরিয়ায় হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ওবামার সিরিয়ায় হামলা চালানোর যে সিদ্ধাšত্ম নিতে যাচ্ছে তা হতে পারে বড় ধরনের ভুল পদক্ষেপ । বর্তমানে সিরিয়ায় সামরিক হামলা বিষয়টি কংগ্রেসের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে । তবে ওবামার এই কৌশলকে আমি মনে করি বাহুবল ও লজ্জার স্ট্রাটেজি।
অভিযোগ উঠেছে সিরিয় সরকার রাসায়নিক অস্ত্র বা বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করে দেশটির প্রায় ১৪০০ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে । যাদের মধ্যে ৪০০ জন শিশু। সিরিয়ায় এই বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারের ফলে দেশটির প্রায় দেড় হাজার মানুষের যে নির্মম পরিণতি হয়েছে, দেশটির উপর মার্কিন সামরিক হামলা তার চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে । সিরিয়ায় সাম্প্রতিক বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহারে ঘটনায় বিশ্বব্যাপী যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হলে আšত্মর্জাতিক অঙ্গনে এই প্রতিক্রিয়া আরো তীব্রতর হতে পারে। কারণ রাশিয়া ও চীন এই হামলার সরাসরি বিরোধীতা করছে । তারা বলছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমতি ছাড়া এই হামলার পদক্ষেপ হবে আšত্মর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ।
এক্ষেত্রে ইউরোপ হলো একটি সামরিক জাদুঘর, আরবলীগ হলো অখাদ্য এবং অন্যরা হলো নীরব দর্শক। তবে মর্কিন এই সামরিক পদক্ষেপের ফলে সিরিয়া সংকটের সহজ সমাধান হবে এটা বলা মুস্কিল। তাই এই সমস্যা সমাধানে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে । কারণ সামরিক পদক্ষেপ সমস্যা সমাধানে শান্তিপূর্ণ কোন উপায় নয় । এরফলে বহু মানুষ যেমন প্রাণ হারাবে তেমনি ধ্বংস হবে বহু উন্নয়ন অবকাঠামো । এত প্রাণহানি এবং এত ধ্বংসযজ্ঞের পরও দেশটিতে শাšিত্ম ফিরিয়ে আসবে এমনটা বলা দূরহ ব্যবহার । এর স্পষ্ট উদাহরণ বর্তমান ইরাক। দেশটিতে মার্কিন সামরিক হামলার দির্ঘদিন পার হলেও এখনও দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি । প্রায় প্রতিদিনও সেখানে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। এ অবস্থায় সিরিয়া সংকট সমাধানের জন্য আমাদের বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ হামলা হলে দেশটিতে আসাদ বিরোধী আলকায়দা গ্রুপ লাভবান হবে। এতে দেশটির বর্তমান সংকট সমাধানে পরিস্থিতিকে আরো জটিলতর করে তুলতে পারে। তাই আমি মনে করি সিরিয়ায় গ্যাস ব্যবহার মোকাবেলায় ক্রুস ক্ষেপণাস্ত্র হামলা উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ নয় । বরং এর ফলে এ অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনাকে আরো উস্কে দিবে। এমনকি এর ফলে প্রতিবেশি দেশ ইরান যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে আগাবে না সে নিশ্চয়তা কে দিবে ?
তাই সিরিয়া সংকট নিরসনে সামরিক পদক্ষেপের আগে সব ধরনের কূটনৈতিক উপায়কে কাজে লাগাতে হবে। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য যারা দায়ী অর্থাৎ যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত সেই আসাদ ও তার পরিবার এবং বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট সেনাসদস্যদের চিহ্ণিত করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে । কারণ তাদের এ কাজ মানবতার জন্য লজ্জার । তাদের নাম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনতে হবে , তাদেরকে দাঁড় করাতে হবে আšত্মর্জাতিক অপরাধ আদালতে । বিশ্ববাসীকে জানতে হবে কারা মানবতা বিরোধী এই বর্বর অপরাধযজ্ঞের জন্য দায়ী।
তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা সহজ না হলেও অসম্ভব কিছু নয়। এজন্য বিশ্ব কমিউনিটিকে একসাথে কাজ করতে হবে।
আর সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হলে সিরিয়াও পাল্টা আঘাত হানার চেষ্টা করবে । সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে । এবং বিশ্বজনমত এই হামলার বিপক্ষে যেতে পারে। তাই আমাদের উচিত সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমতকে কাজে লাগানো । তাদেরকে শান্তির আওতায় আনার জন্য নতুন করে ছক আঁকতে হবে, যাতে করে আর কোন প্রাণহানি ছাড়াই এই জঘন্য অপরাধের বিচার করা সম্ভব হয়।
ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন/ ভাষান্তর: আবু সাইদ