যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসা ফের চাঙ্গা
বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১০ সালের পর এই প্রথমবারের মতো অস্ত্র ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালে এসে বিশ্বের অস্ত্র উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় ১০০টি কোম্পানির অস্ত্র ব্যবসা আগের বছরের তুলনায় ১.৯ শতাংশ বেড়েছে। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপ্রি) ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরে কোম্পানিগুলোর মোট ব্যবসা দাঁড়িয়েছে ৩৭৪.৮ বিলিয়ন ডলারে। চীনের অস্ত্র ব্যবসার পরিমাণ এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অস্ত্র শিল্পে মার্কিন কোম্পানিগুলো রয়েছে বিক্রির শীর্ষে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর অস্ত্র ব্যবসার পরিমাণ ২১৭.২ বিলিয়ন ডলার। আগের তুলনায় এটা ৪ শতাংশ বেশি। বিশ্বের মোট অস্ত্র ব্যবসার ৫৭.৯ শতাংশই করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিপ্রি বলেছে, অন্যান্য দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন ও দেশটির কাছ থেকে মিত্র রাষ্ট্রগুলোর বৃহৎ অস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয় তাদের ব্যবসার এই পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিনের ২০১৬ সালে অস্ত্র ব্যবসা বেড়েছে ১০.৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি মোট ৪০.৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। অন্যদিকে একই সময়ে পশ্চিম ইউরোপের অস্ত্র কোম্পানিগুলো মোট ৯১.৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। ২০১৫ সালের তুলনায় এটা ০.২ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালের মোট অস্ত্র বিক্রির ৮২.৪ শতাংশই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের দখলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মাঝেও ব্রিটেনের অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। ২০১৬ সালে দেশটির অস্ত্র ব্যবসা ২ শতাংশ বেড়েছে।
সিপ্রির প্রতিবেদন মতে, রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রিও অনেকটাই বেড়েছে। ২০১৬ সালের দেশটির অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৬.৬ বিলিয়ন ডলার, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৩.৮ শতাংশ বেশি। মস্কো তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। তবে দেশটির মন্থর অর্থনীতির কারণে সম্প্রতি সেই প্রক্রিয়ার গতি কিছুটা কমে গেছে। সিপ্রির অস্ত্র ও সামরিক ব্যয় কর্মসূচি পরিচালক অডি ফ্লুর্যান্ট বলেন, ‘অস্ত্রের বিষয়টি অনেকটা অর্থের ওপর নির্ভর করে। তেল ও গ্যাসের দাম পড়ে যাওয়ায় মস্কো আর্থিকভাবে বেশ আক্রান্ত হয়েছে।’
এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র বিক্রির উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের মাঝে ২০১৬ সালে দেশটি ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। আগের বছরের তুলনায় এটা প্রায় ২০.৬ শতাংশ বেশি। বিশ্বের মোট অস্ত্র ব্যবসার ২.২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে দক্ষিণ কোরিয়া। সিপ্রির জ্যেষ্ঠ গবেষক পিটার ওয়েজেম্যান বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার বর্ধিষ্ণু পরমাণু সক্ষমতা দক্ষিণ কোরিয়াকে অস্ত্র খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের দিকে নিয়ে গেছে।’ ব্রাজিল ও তুরস্কের কোম্পানিগুলোর অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশটির অস্ত্র বিক্রি যথাক্রমে ১০.৮ ও ২৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মোট অস্ত্রের বিক্রি বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ০.৫ শতাংশ এবং ২০০২ সালের পর থেকে এটা প্রায় ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বৈশ্বিক অস্ত্র বিক্রিতে বৃদ্ধি প্রত্যাশিতই ছিল। কেননা বহু দেশই তাদের জাতীয় বৃহৎ অস্ত্র কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া কয়েকটি দেশে চলমান সামরিক অভিযান এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা অস্ত্রের চাহিদা বাড়িয়েছে।’