ওআইসি সৈন্যবাহিনী গড়লে কী হবে ইসরাইলের?
৭০ বছর আগে অবৈধভাবে ফিলিস্তিনের ভূমিতে গড়ে উঠেছিল ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মদদ ও স্বীকৃতির জোরে ফিলিস্তিনের আদিবাসী মুসলমান ও খ্রিস্টানদের ওপর নির্যাতন চালিয়েই যাচ্ছে অবৈধ রাষ্ট্রটি।
এর অবসানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মধ্যপ্রাচ্যের বিরোধপূর্ণ ঐতিহাসিক ভূমিতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল নামে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছিল।
কিন্তু দুই রাষ্ট্রের সমাধানের কথা বলে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডজুড়েই একক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
এ চেষ্টায় সর্বশেষ গত ৬ ডিসেম্বর বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি। এ দিন পবিত্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ ঘোষণার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে মুসলিম বিশ্ব।ফিলিস্তিনের জন্য কয়েক বছর পর পরই এমন বড়সড় বিক্ষোভ করে থাকে মুসলমানরা। এক সময় বিক্ষোভ বন্ধ করে তারা ঘরে ফিরে যায়। অন্যদিকে ইসরাইলের দখলদারির কোনো নড়চড় হয় না।
এবারও একই পরিস্থিতি ঘটবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। কিন্তু এবার ফিলিস্তিন ইস্যুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে পবিত্র জেরুজালেম শহর, যেখানে মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত। তাই এবার আর মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আগের মতো দায়সারা ভূমিকা রাখতে পারবে না।
যদিও সৌদিসহ আরব দেশগুল জেরুজালেম ইস্যুতে তেমন জোরালো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তুমুল সমালোচনাও হচ্ছে।
তবে আজ বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মুসলিম দেশগুলোর সবচেয়ে বড় জোট ইসলামী সহযোগী সংস্থা ওআইসির জরুরি বৈঠককে কেন্দ্র করে আশার আলো দেখছেন অনেকেই।
জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের আগুন দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯৬৯ সালে ওআইসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
তাই ইসরাইলের দখলদারি থেকে জেরুজালেমকে রক্ষায় ওআইসি কার্যকর ভূমিকা নিতে বাধ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওআইসি হচ্ছে ৪ মহাদেশব্যাপী ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগঠন। এর সদস্য দেশগুলো একত্রিত হয়ে সেনাবাহিনী গড়লে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক বাহিনী।
ওআইসির সম্মিলিত বাহিনীর সক্রিয় সৈন্যের সংখ্যা দাঁড়াবে কমপক্ষে ৫২ লাখ ৬১০০ জন। আর সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেট দাঁড়াবে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে ইসরাইলের সক্রিয় সেনার সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার। তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন।
ফলে ইসরাইল সৈন্যরা কখনোই মুসলিম সৈন্যদের সঙ্গে পেরে উঠবে না। বরং মুসলিম দেশগুলো চাইলে ইসরাইলকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলতে পারবে।
ওআইসির বুধবারের জরুরি বৈঠকে ‘জেরুজালেম রক্ষা গোষ্ঠী’ নামে একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে, যার মাধ্যমে কিছু দেশ থাকবে যারা জেরুজালেম রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
সম্ভাব্য মুসলিম সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তও হতে পারে। এটি নিশ্চিত করবে যে মুসলিম সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ইসরাইল ঘেরাও হয়ে রয়েছে।
সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য অপারেশনে প্রথম অবস্থায় আড়াই লাখ সৈন্য অংশগ্রহণ করবে। এজন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নৌ, স্থল ও আকাশ পথগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ৫০০টি ট্যাংক ও সাজোয়াঁ যান,১০০টি বিমান, ৫০০টি হেলিকপ্টার এবং ৫০টি জাহাজ এতে অংশ নেবে।
তুরস্ক এক্ষেত্রে অপারেশনের কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তার সেনাবাহিনীর জন্য। এদের প্রায় ৪০০০ ট্যাংক, ১০০০ বিমান, ১৩টি সাবমেরিন রয়েছে, যার মাধ্যমে তুরস্ক একাই ইসরাইলকে দমন করতে সক্ষমতা রাখে।
ওআইসি সদস্যদের মধ্যে পাকিস্তান একমাত্র মুসলিম পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ যাদের ভূমিকাও অনেক বেশি।
সম্প্রতি রিসেপ তায়েপ এরদোগান ইসরাইল ইস্যুতে তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা আজ ভাবছে যে জেরুজালেম তাদের, আগামীকাল তারা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।‘
মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামউদ্দিন হুসাইন বলেন, ‘জেরুজালেমকে রক্ষা করার জন্য তাদের সৈন্য প্রস্তুত রয়েছে।‘
সম্প্রতি তুরস্ক ওআইসির সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বন্ধন সুদৃঢ় করেছে। তুরস্ক তার প্রতিবেশী দেশ ইরাকের সঙ্গে সামরিক অনুশীলনের কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়াও কাতার, সোমালিয়া এবং অন্যান্য উপকূলীয় ও আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে অনেক চুক্তি সই করেছে।