মামলার মুখে বিবিসি ও গার্ডিয়ান
প্যারাডাইজ পেপার্স নামে পরিচিত আয়কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় মামলার মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রভাবশালী দুই ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও গার্ডিয়ান। অফশোর ব্যাংকিং সেবা দেওয়া বিশ্বের অন্যতম বড় আইনি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবাই এই মামলা করতে যাচ্ছে। বিবিসি ও গার্ডিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অ্যাপলবাই বিবিসি ও গার্ডিয়ানের কাছে থাকা অফশোর ব্যাংকিংয়ের তথ্য প্রকাশ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, প্যারাডাইজ পেপার্সে মূলত ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে’র মাধ্যমে গোপনীয় সব তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য চুরি করা হয়েছে।
এদিকে, বিবিসি ও গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্যারাডাইজ পেপার্সের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের প্রক্রিয়ার পক্ষে তারা দৃঢ় অবস্থান নেবে। ‘বৃহত্তর জনস্বার্থে’র কথা বিবেচনায় নিয়েই এসব তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। আর এসব তথ্যের উৎস জানা নেই বলে দাবি করেছে বিবিসি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ও ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরা কিভাবে গোপনে ‘ট্যাক্স হেভেন’ নামে পরিচিত বিভিন্ন স্থানে গোপনে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে থাকে, সেই তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ে প্যারাডাইজ পেপার্সে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের এমন অবৈধ বিনিয়োগের মাধ্যমে কর ফাঁসির তথ্যও এর মাধ্যমে বের হয়ে আসে। এমনকি ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের ব্যক্তিগত সব সম্পদের তথ্যও প্রকাশ হয়ে যায়।
প্যারাডাইজ পেপার্সের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রায় এক কোটি ৩৪ লাখ নথির প্রায় অর্ধেকই অ্যাপলবাইয়ের। এসব নথি প্রথম হাতে পায় জার্মান গণমাধ্যম সুডডয়েচে জেইতুং। এরপর বিশ্বের প্রায় ৬৭টি দেশের শতাধিক গণমাধ্যম এসব নথি নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। বিবিসি ও গার্ডিয়ানও এই অনুসন্ধানে যুক্ত ছিল।
প্যারাডাইজ পেপার্স ফাঁস করে দেওয়ায় বিবিসি ও গার্ডিয়ানকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখে ফেলা ছাড়াও এসব তথ্যের পুনর্ব্যবহার বন্ধে স্থায়ী নির্দেশও দাবি করছে অ্যাপলবাই। গণমাধ্যমের হাতে থাকা সব নথিও ফেরত চায় তারা। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গ্রাহক ও সহকর্মীদের তথ্যের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব তাদের পালন করতে হয়।
বিশ্বের প্রভাবশালী সব ব্যক্তির আয়কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য ফাঁস করে দিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মুখে পড়ার বিষয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা’র মাধ্যমে এসব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। অন্যাথায় এসব তথ্য গোপনই থেকে যেত এবং তারা এসব তথ্য প্রকাশ করে দিয়েছে বলেই এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিচ্ছে।
গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে দায়িত্বশীল যে সাংবাদিকতার নজির তারা তৈরি করছেন, সেই ধারাকে দুর্বল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবেই এই আইনি লড়াইয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।