জেদ্দায় চলছে আন্তর্জাতিক বইমেলা
সৌদি আরবের রাজধানী বাণিজ্য ও বন্দর নগরী জেদ্দায় চলছে তৃতীয় আন্তর্জাতিক বইমেলা। মক্কার আমির প্রিন্স খালেদ আল ফয়সাল মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি সদ্য প্রয়াত সৌদি আরবের বিশিষ্ট কবি খালাফের স্মরণে সন্মাননা প্রদান করেন। ১৪ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই আন্তর্জাতিক বইমেলা চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পৃথিবীর প্রায় ৪৩ টি রাষ্ট্র থেকে ৫০০ শতাধিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এতে অংশ গ্রহণ করেছে। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ মেলা সবার জন্য উম্মুক্ত থাকে। শুক্রবার বিকাল ৪ টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলে। তবে সৌদিআরবের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে বইমেলায়।
আত্মউন্নয়ন ও শিশুদের বই পড়ার ও মেলায় উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রকাশনী তাদের বই মেলায় আসা পাঠকদের সৌজন্য বিলি করছে।
অনেক প্রকাশনী বইয়ের পাইকারী মূল্যের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। আবার কোন প্রকাশনী ৫০০ রিয়ালের বই কিনলে ১০০ রিয়াল ছাড় দিচ্ছে। বড় কলেবরের বইয়ের সঙ্গে শিশুতোষ বই ফ্রি দিচ্ছে। সর্বোপরি উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে বইমেলা। দর্শক, প্রকাশক ও লেখকদের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। এই মেলা হতে শ্রেষ্ঠ প্রকাশক ও বেষ্ট সেলার বই নির্বাচন করা হবে । উচ্চতর গবেষকগণ তাদের গবেষণা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাদি ক্রয় করছেন। সৌদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন কোম্পানীর সহযোগীতায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক এই বইমেলায় প্রথমবারের মত বাংলাদেশের ছয়টি সরকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করেছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, নজরুল ইন্সটিটিউট, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর।
মেলায় বাংলাদেশের স্টলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের বিভিন্ন ভ্রমন কাহিনী, শিশু কিশোরদের পত্রিকা, বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিচিতমুলক বই খুজতে দেখা গেছে।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানান, তারা মেলায় এসে একুশে বইমেলার আমেজ খুজে পাচ্ছেন। তারা ভবিষ্যতে মেলায় আরও বড় পরিসরে সরকারী বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
মেলায় বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, সৌদি আরবের বিশাল বাংলাদেশী কমিউনিটির পাশাপাশি বিদেশীদের কাছে মেলার মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এই মেলা ভূমিকা রাখবে। এছাড়া মেলার মাধ্যমে সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশের সাথে সংস্কৃতির মেলবন্ধন গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এই প্রথম জেদ্দা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, মেলার মাধ্যমে সৌদি আরবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশীদের কাছে দেশের সংস্কৃতির পরিচয় ঘটাতে সক্ষম হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাস এর উদ্যোগে ও জেদ্দাস্থ কনস্যুলেট জেনারেলের সার্বিক সহযোগিতায় বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।