মুক্তিযুদ্ধের শেষ অধ্যায়- আর শেষ হয়নি
জামাল আস- সাবেত: এই যে ধানক্ষেতের গন্ধ নিচ্ছি, ডগায় ডগায় হাত বুলাচ্ছি, ছড়ায় ছড়ায় সোনালী ধান শুঁকছি স্বাধীন মনে; ভোরের শালিকেরা শিশিরবিন্দুর সাথে খড়ে স্তূপে খেলা করছে। দূর্বাঘাসে লেগে আছে সচ্চ শিশিরজল। ঐ যে খেজুর রসের সাথে বুলবুলিরা মিশে যাচ্ছে, দিগন্তে দিগন্তে দোল খায় অদৃশ্য সমীরণ।
কিসের নেশায় বুঁদ হয়ে যান কবি? গাঁয়ের আল পথ ধরে নিরবে প্রেম খুঁজতে থাকেন তিনি। পেয়েও যান মনে মনে। এই যে, পথের বাঁকে বাঁকে সিম গাছের পাতায় জড়িয়ে থাকে থোকা- থোকা সিম। ঐ যে ডোবায় ডোবায় বিশুদ্ধ জল সৌন্দর্যরূপ ধারণে প্রতীক্ষিত; যখন সূর্য জেগে উঠবে বলে। হাঁটতে হাঁটতে কবি চলে যান কালু চাচা’র ঘরে, বসেন বিছানার পাশে।
– চাচা, ও চাচা! এখনো ঘুমচ্ছেন নাকি? ঐদিকে সূর্য যে উঠে গেল!
– (কাশতে কাশতে) সূইর্যকে উঠতে দে, উঠতে দে। আমরা উঠে কী আর হবে!
– আজ না মুক্তিযুদ্ধের শেষ অধ্যায় শুনাবেন বলে আমাকে আসতে বললেন।
– আইজকে শরীরটা ভালা নাইরে- কাইলকা আইছ।
– শরীরটা আবার খারাপ করেছে বুঝি? (কপালে হাত রাখলেন কবি) – ইশ! গা টা একদম পুড়ে যাচ্ছে দেখছি।
– শায়লা, ‘চাচার দিকে নজর রাখিস।’ চাচা, আমি গেলাম।
সেদিনের সন্ধ্যায় পাড়ার দোকানের চায়ের কাঁপে চুমুক দিতেই খবর এলো, এই মাত্র চাচা মারা গেছেন। শায়লা মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে বারান্দায়। ইশার নামাজের পর জানাজা পড়ে কবরে রাখা হল চাচাকে।
সাতদিন পর আবার সন্ধ্যায় পাড়ার দোকানের চায়ের কাঁপে চুমুক দিতেই খবর এলো, গতরাতে শায়লা ধর্ষিত হয়েছে। কাকভোরে কবি হেঁটে চলছেন। দ্রুত গতিতে হেঁটে চলছেন। নতুন সূর্য উঠবে উঠবে বুঝি!
দেখলেন, চাচা’র ঘরে একটি ঝুলন্ত লাশ! শায়লা দড়ির সাথে ঝুলছে।
নতুন সূর্য উঠে গেল। সেদিনের সন্ধ্যায় এলাকার নেতার ছেলেরা খুব করে চা পান করল। দাঁত বের করে হাসল। ওদের আনন্দ যেন আর থামছে না। সেখান থেকে ছলছল চোখে কবি নিরবে উঠে গেলেন, রাতে’পরে আরেকটি সূর্য দেখবেন বলে….।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
jamalassabet@gmail.com