বড়দিনে বৃষ্টি আর ট্রাম্পের ঘোষণার অভিঘাত
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মতো শরণার্থী শিশু যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান বেথেলহেমেও উদযাপিত হচ্ছে বড়দিন। তবে ট্রাম্পের জেরুসালেম ঘোষণার ছাপ পড়েছে সেই আয়োজনে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টিজনিত বৈরি আবহাওয়া। তা সত্ত্বেও যিশুর জন্মস্থান জেরুজালেমের শহরতলী বেথেলহেমে ড্রাম বাজিয়ে বড়দিন উদযাপন করছেন ফিলিস্তিনিরা। সেখানকার ম্যানজার স্কয়ারের ওই অনুষ্ঠান দেখতে জড়ো হয় শত শত ফিলিস্তিনি। চার্চ অব দ্য ন্যাটিভিটির অভিমুখে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্যারেড। উৎসবে যোগ দিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে তুমুল নিন্দা ও প্রতিবাদ জারি রয়েছে। ইসরায়েলের দখলকৃত জেরুজালেমেই যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। যে পথ দিয়ে যিশুকে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেই পথটি এখনও বিদ্যমান। এই পথেই যাওয়া যায় যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার স্থান ও সমাধিতে। এছাড়া তার জন্মও বেথেলহেমে। ১ হাজার ৭০০ বছর আগে বাইজেন্টাইন সম্রাজ্ঞী হেলেনা নির্মাণ করেন পবিত্র সমাধির গির্জা (দ্য চার্চ অব দ্য হলি সেপালচার)। এদিকে ইহুদিদের পশ্চিম দেওয়াল বা কটেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি বড় পাথর এখনও দৃশ্যমান আছে। তাদের কাছেও এটি পবিত্র স্থান। সে কারণে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয় খ্রিস্টান-মুসলিমসহ ইহুদিরাও। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুজালেম আর গাজা উপত্যকায়। রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর সহিংসতায় ফিলিস্তিনের ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শত শত ফিলিস্তিনি। এই বাস্তবতায় বড়দিনে সেই প্রতিরোধ রুপ নেয় সম্প্রীতিতে। ফরাসি সংবাদমাধ্যম নিউজ টোয়েন্টিফেরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চার্চ অব দ্য ন্যাটিভিটিতে উৎসব হয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণায় সৃষ্ট উত্তেজনার মাঝেই ক্রিসমাস ট্রি দেখতে জড়ো হয় ফিলিস্তিনিরা।
বড়দিনের উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও। প্রতিবছরের বড়দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন অনেক মানুষ। সবাই পরষ্পরের সাথে ছবি তুলতে থাকেন। তবে অন্যান্য বছরগুলোতে এখানে অনেক পর্যটক আসলেও এবার সহিংসতার কারণে তেমন দৃশ্য চোখে পড়েছে কমই। এছাড়া আবহাওয়াও বিরুপ। বৃষ্টি ও ঠান্ডায় উৎসব কিছুটা ম্লান। লন্ডন থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, ‘ বেথেলহেমের বাসিন্দাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে উৎসব করাটা জরুরি। আমি অনেককই চিনি যারা এই সহিংসতার কারণে আসতে চাননি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমার আসা উচিত।’
ফরাসি পর্যটক ক্লেয়ার দেগো বলেন, তিনি ট্রাম্পের স্বীকৃতি মানেন না। কারণ এটা সহিংসতা তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্তে পবিত্র স্থানে প্রভাব ফেলতে পারে না। জেরুজালেম সবার। ট্রাম্প যাই বলুক না কেন কিছু যায় আসে না।’
পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিমতীরে প্রায় ৫০ হাজার খ্রিষ্টানের বসবাস। বেথেলহেমের নিকটবর্তী শহর বেই সাহুরে বসবাসকারী খ্রিষ্টান নারী নাহিল বানুরা বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে এ বছরের বড়দিন ‘দুর্বিষহ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ শুধু বাইরে যাওয়ার জন্যই যাচ্ছে।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার কোনও সহিংসতা ছিলো না। উৎসবে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেছে ফিলিস্তিনিরা। সহিংস প্রতিরোধ না হলেও বড়দিনের র্যালিতেও ট্রাম্পবিরোধী ব্যানার দেখা গেছে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। বিকালের দিকে উৎসব শুরু হলেও রাতের দিকে তা কমতে থাকে। বৃষ্টি ও ঠান্ডায় বাড়ি বা গির্জায় আশ্রয় নিতে থাকেন অনেকে। বেথেলহেমের মেয়র অ্যান্তন সালমান বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ থাকায় উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বড়দিনের উৎসব এবার সীমিত রাখতে চেয়েছি। যারা সাম্প্রতিক সহিংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই আমরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বোঝাতে চাই যে আমরা বাঁচতে চাই, স্বাধীনতা চাই, জেরুসালেমকে আমাদের রাজধানী চাই।’ জেরুজালেমের সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মগুরু আর্চবিশপ পিয়েরবাতিস্তা পিজাবেলা ইসরায়েলি সামরিক চেকপয়েন্ট দিয়ে বেথেলহেমে প্রবেশ করেছেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করলেও এবার কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন আনন্দের সময়। শত বাধা অতিক্রম করে আমরা উৎসব করবো।’ জেরুসালেমের শান্তি কামনা করে তিনি সব রাজনীতিবিদদের সবাইকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানান।