ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত
মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম দেশ ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বা বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা। এটি শুরুর আগেই ওই দেশের আলেম সমাজ ও ওলামা কাউন্সিল প্রতিবাদ করে আসছে। এ আয়োজনের একেবারেই বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ওই দেশের ইসলামপন্থী দলগুলো। প্রতিযোগিতার আয়োজকদের এ আয়োজন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন খোদ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী সুরিয়াধর্মা আলি। মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে এ ধরনের আয়োজন উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন ধর্মমন্ত্রী। দেশটির শীর্ষ ধর্মীয় নেতারা এ আয়োজনের বিপক্ষে উল্লেখ করে তিনি এ অবস্থান নিয়েছেন। প্রতিবাদের মুখে আয়োজকরা ‘সুইম সুট বা বিকিনি রাউন্ডটি প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দিলেও প্রতিযোগীদের আঁটসাঁট পোশাক পরা এবং দেহের অনাবৃত অংশগুলো প্রদর্শনের বিষয় এখনো রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রী সুরিয়াধর্মা আলি জানান, সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের ঘোষণা করার পর থেকেই ইন্দোনেশিয়ার ওলামা কাউন্সিল এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।
একই দিন রাজধানী জাকার্তায় প্রতিযোগিতা আয়োজকদের একটি ভবনের বাইরে হিযবুত তাহরির নামক একটি ইসলামী সংগঠনের হাজার হাজার কর্মী দেশটিতে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং এটি বাতিলের দাবি জানায়। প্রতিবাদকারীদের অধিকাংশই ছিল নারী। তারা সুন্দরী প্রতিযোগিতাকে সাংস্কৃতিক নৈরাজ্য অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যানের আহবান জানান।
রাজধানী জাকার্তা ছাড়াও সুমাত্রার মেডান এবং পেকানবারু শহর এবং সুলাবেসি রাজ্যের মাকাস্সা শহরে হাজার হাজার নাগরিক বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা বন্ধের দাবি জানায়।
এদেকে শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজক এমএনসি নামক স্থানীয় একটি মিডিয়া গ্রুপ তাদের অনঢ় মনোভাব প্রকাশ করে বলেছে, বালিতে নির্ধারিত সময়েই বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। তারা বলেছে, অনুষ্ঠান বাতিল বা স্থান পরিবর্তন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া সরকার তাদের নিরাপত্তা এবং রক্ষা করার নিশ্চয়তা দিয়েছে বলেও দাবি করেন।
বালিদ্বীপের বিনোদন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় এই প্রতিযোগিতায় কয়েকটি আইটেম থাকবে। চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা হবে জাকার্তার বাইরে বোগোরে। এই প্রতিযোগিতায় ১৩০ জনের বেশি সুন্দরী প্রতিযোগী অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার ২৪ কোটি মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশই মুসলমান। সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীদেহ প্রদর্শনীর মাধ্যমে অশ্লীলতার প্রচার ও প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে দেশটিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
ওলামা কাউন্সিলের উপ-প্রধান আমিরাসিয়া তামবুমান বলেন, প্রতিযোগিতার ব্যাপারে ছলনা করে জনগণকে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, এই প্রতিযোগিতা শুধু দৈহিক সৌন্দর্য নয়, ভেতরের সৌন্দর্যেরও। জুনাইদি বলেন, ওলামা পরিষদ তার অবস্থান এখন পরিষ্কার করেছে। এখন এটা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার তারা প্রতিযোগিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে কিনা। কাউন্সিলের সিনিয়র কর্মকর্তা মুহিউদ্দিন জুনাইদি জাকার্তায় সাংবাদিকদের বলেন, নারীদেহ প্রকাশ্যে অনাবৃত করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম বা নিষিদ্ধ ।
নারীদেহ বিবসনা করে প্রতিযোগিতা এক শ্রেণীর মানুষের জন্য আনন্দের হলেও নারীর জন্য অবমাননাকর। ইসলাম মুসলিম নারীদের শুধুমাত্র সৌন্দর্য প্রদর্শনের বস্তুতে পরিণত করার চেষ্টা থেকে রক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করে। তাই সময় এসেছে নারীবাদীদের এই ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ নামে দেশে-বিদেশের তাবৎ সুন্দরী প্রতিয়োগিতার প্রতিবাদ করার।
নারী কোনো পণ্য নয়, তাই প্রতিযোগিতার নামে নারীকে বিশ্বমিডিয়ার সামনে বিবস্ত্র করার প্রতিবাদে নারীরা আজ সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
২০১২ সালে পপ তারকা লেডিগাগা বিরোধিতাকারীদের সমালোচনার মুখে তার কনসার্ট সফর বাতিল করেন। সংক্ষিপ্ত পোশাক পরার কারণে তার বিরোধিতা হয়।