সাতক্ষীরায় বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ২৭
সাতক্ষীরায় জেলা বিএনপির কর্মী সম্মেলনে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে জেলা মত্স্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান নিহত ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন আলমের উপস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে দশটার দিকে শিল্পকলা একাডেমীতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ এক পর্যায়ে পার্শ্ববর্তী আব্দুর রাজ্জাক পার্কসহ গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। আহতদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইফতেখার আলী, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুস সামাদ, জাসাস নেতা এখলেছার আলী বাচ্চু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, আবু রায়হান, বাবলুর রহমান, আবু ইদ্রিসসহ ১৩ জনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন আলমের উপস্থিতিতে গতকাল বেলা দশটায় শিল্পকলা একাডেমীতে বিএনপির কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব ওই কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিবদমান দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা জানায়, কর্মী সম্মেলনের শুরুতে জেলা বিএনপির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদলের সম্পাদকের বক্তৃতা দেয়ার সময় সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে চিহ্নিত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলীর ভাই জাসাস নেতা এখলেছার আলী বাচ্চু যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল নেতাদের সম্পর্কে কটূক্তি করলে হলরুমে উপস্থিত নেতাকর্মীরা হৈচৈ শুরু করে। এসময় এখলেছার আলী বাচ্চুর ভাই এক/এগার সময়কার সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে চিহ্নিত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলীর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের ক্ষুব্ধ কর্মীরা স্লোগান দিতে শুরু করলে হলরুমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আকস্মিকভাবে কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দীন আলমের সামনেই সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইফতেখার আলীর এক কর্মী চাইনিজ কুড়াল নিয়ে মঞ্চে উঠে এসে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তারিকুল হাসান খানকে মারতে উদ্যত হলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
হুড়োহুড়ির এক পর্যায়ে জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের সদস্যদের সংস্কারপন্থী আখ্যা দিয়ে ধাওয়া করে হলরুম থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় উত্তেজিত নেতাকর্মীদের ছুড়ে মারা চেয়ারের আঘাতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আলী সামনের হট্টগোলকারী নেতাকর্মীদের ধমক দেয়ায় সামনে উপবিষ্ট কর্মী-সমর্থকরা তার প্রতি আরও চেয়ার ছুড়ে মারে এবং সংস্কারপন্থী সংস্কারপন্থী বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। এসময় কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দীন আলমের সামনে দু’পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে লোহার রড, চাপাতি ও চাইনিজ কুড়ালসহ রামদা নিয়ে চড়াও হয়। সংঘর্ষে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইফতেখার আলী, সাবেক ছাত্রদল নেতা আমানউল্লাহ আমান, যুবদল নেতা বাবলুর রহমান, এখলেছার রহমান বাচ্চুসহ সাতাশ জনেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে জেলা মত্স্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ও আমানউল্লাহ আমানসহ তের জনকে তাত্ক্ষণিকভাবে সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর দুটার দিকে আমানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে পাঠানোর পর সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহমতউল্লাহ পলাশ, ডাকসুর সাবেক নেতা অধ্যাপক আবু সাইদ, যুবদল নেতা হাসান হাদী, তারিকুল হাসান খান, আইনুল ইসলাম নান্টা, কামরুজ্জামান টুকুসহ নেতারা বার বার চেষ্টা চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আলী বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে তার সমর্থকদের উপর হামলা চালানো হয়। জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মী সম্মেলনকে ভণ্ডুল করতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করে এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে থাকে। একপর্যায়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সরকারের সাড়ে চার বছরের মেয়াদকালে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা তাদের বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে তারা হামলার শিকার হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এদিকে দু’গ্রুপের সংঘর্ষের পরও কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলম তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. শহিদুল আলম, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দীন, অ্যাড. আব্দুস সাত্তার, মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ, চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। আমান উল্লাহ আমান হত্যার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।