ট্রাম্পকে নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ ঘটনার বই প্রকাশে বাধা
শপথ নেবার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নানা-আলোচনা আর সমালোচনার ধকল সামাল দিয়ে এগুতে হচ্ছে। তবে মন্দা যেন তার পিছুই ছাড়ছে না। এবার তাতে যেন ঘি’ই ঢেলে দিলো সাংবাদিক ও লেখক মাইকেল ওলফ এর লেখা ‘ফায়ার এন্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প’।
হোয়াইট হাউসের অন্দরমহল ও বাইরে ঘটে যাওয়া নানা ইস্যু নিয়ে লেখা বইটি বাজারের আসার আগেই বিতর্ক ধুঁয়ো তোলেছে মার্কিন মুল্লুকে।
আগামী সপ্তাহে বাজারে আসার কথা থাকলেও বইটি নিয়ে বিব্রত ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার এক আইনজীবির মাধ্যমে লেখক ও প্রকাশককে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে বইটির প্রকাশ বন্ধ এবং ক্ষমা চাইতে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সবগণমাধ্যমই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
সিএনবিসি এর প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউস এর ভিতর-বাহির ঘটনাবলি নিয়ে লেখা বইটি আগামী মঙ্গলবারে বাজারে আসতে পারে। বইটিতে ট্রাম্পের অন্যতম সহযোগি এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক স্ট্রাটেজিস্ট স্টিভ বেনন এর উদ্ধৃত করা এবং অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। লেখার কিছু অংশ বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক ম্যাগজিনে প্রকাশ পেয়েছে।
আইনজীবির পক্ষ থেকে বইটির লেখককে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বইটির কোন ধরনের প্রকাশ, প্রচার এমনকি অংশ বিশেষ প্রচার না করার এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন। বইয়ে ট্রাম্প সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে সেজন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।
বুধবারে প্রকাশ পাওয়া বইটির কিছু অংশের লেখায় বলা হয়, বেনন সাংবাদিক ওলফকে জানান, ২০১৬ সালে রাশিয়ার আইনজীবির সঙ্গে ট্রাম্প পুত্রের বৈঠকটি একধরনের ‘রাষ্ট্রদোহিতা’ এবং ‘দেশবিরোধীকান্ড’। সে প্রেসিডেন্ট্র প্রার্থী ট্রাম্প তাদের সঙ্গে দেখা করেননি এটা বিশ্বাস করার মতো কথা না।
সমালোচনার তোপের মুখে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্টিভের শুধু পদস্খলনই ঘটেনি, মানসিক ভারসাম্যও হারিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কিংবা আমার প্রেসিডেন্সি নিয়ে কোন কিছু করার সুযোগ স্টিভের ছিলনা। সে সুযোগ একদমই সীমিত।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বইটিতে বলা হয়েছে-প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করেছেন ট্রাম্প, তার শপথ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে পারেননি এবং হোয়াইট হাউসে মনমরা হয়ে থাকতেন।
ইভানকা ট্রাম্প গোপনে প্রেসিডেন্ট হবার স্বপ্ন বুনছেন সে বিষয়ও উঠে এসেছে সাংবাদিক ওলফের বইয়ে।
বইটি মিথ্যা এবং ভুল তথ্য দিয়ে ভরপুর বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত ভিতর ও বাহিরের ২০০ এরও বেশি লোকের সাক্ষাতকার বইটিতে জমা করেছেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক ওলফ।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প পুত্রের সঙ্গে রাশিয়ার আইনজীবির বৈঠক এবং নির্বাচনে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা নিয়ে স্টিভ ভেনন মুখ খুলতে যাচ্ছেন। সাংবাদিককে ওলফকে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা ট্রাম্প পুত্রকে নিয়ে ন্যাশনাল টিভিতে হাঁটের হাড়ি ভেঙ্গে দিব।’ তিনি আরো বলেন, সমুদ্রের তীরে বসেতো ৫ নম্বর সংকেত থামানোর চেষ্টা বৃথা! আমার টিভিতে দেয়া বক্তব্য নিয়ে কোন রাশিয়ান সাক্ষ্য দিতে রাজি হবে না, কোন আইনজীবিও আসবেনা লড়াই করতে।
ওয়াশিংটন টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, লেখক ওলফ এবং প্রকাশক হেনরি হলটকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আইনজীবির পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, বইটি যে আসলেই বিদ্বেষমূলক তার প্রমাণ রয়েছে শুরুর দিকেই। শুরুতেই লেখা আছে বইয়ে অসত্য বিবৃতির কিছূ উপাদান রয়েছে। বইয়ে ট্রাম্পকে অবমাননা করে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে তাতে কোন সূত্রের উদ্বৃতিও নেই।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বইটি সম্পর্কে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কি তা জানতে চাইলে, হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি সারাহ সেন্ডার্স বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি এটি আক্রমণাত্মক, বিরক্তিকর। প্রেসিডেন্ট এবং তার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা ও আক্রমণাত্মক অভিযোগ করা হয়েছে।