শেয়ারবাজারের ইতিহাসে আসছে সবচেয়ে বড় আইপিও

aramcoসৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঠিক দুই বছর আগে যখন ঘোষণাটি দিয়েছিলেন, তা শুনে প্রথম স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন লন্ডন, নিউইয়র্ক থেকে শুরু করে বিশ্বের বড় বড় শেয়ার মার্কেটের কর্তাব্যক্তিরা।
প্রথমে তারা বিশ্বাসই করতে চাননি যে, এটা আসলেই ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু যুবরাজ সালমান পরবর্তী মাসগুলোতে পরিষ্কার করে দিলেন যে তিনি আসলেই এটা করতে যাচ্ছেন। শুক্রবার সেই লক্ষ্যে আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিল সৌদি আরব। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি, সৌদি আরামকো-কে একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হলো।
এর উদ্দেশ্য এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে যেন সৌদি আরামকো’র পাঁচ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিক্রির জন্য ছাড়া যায়। সব কিছু যদি পরিকল্পনামাফিক আগায়, এটি হবে বিশ্বের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আইপিও বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং।
স্টক মার্কেটে আরামকোর মাত্র পাঁচ শতাংশ শেয়ার ছেড়েই সৌদি সরকার ১০ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত (১০০ বিলিয়ন ডলার) তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সৌদি আরামকো যে শুধু বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি তাই নয়, এটির পর যে কোম্পানিটি দ্বিতীয় স্থানে আছে, তার চাইতেও এটি বহুগুণ বড়।
যেমন তেলের রিজার্ভের কথা ধরা যাক। সৌদি আরামকোর তেলের রিজার্ভ হচ্ছে এই মুহূর্তে ২৬১ বিলিয়ন ব্যারেল। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা মার্কিন কোম্পানি এক্সনের তেলের রিজার্ভ হচ্ছে ১৩ বিলিয়ন ব্যারেল। বাজারমূল্যের হিসেবেও সৌদি আরামকোর ধারে কাছে নেই কেউ।
এই মুহূর্তে এই কোম্পানির বাজারমূল্য হচ্ছে দুই ট্রিলিয়ন থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলার। (এক ট্রিলিয়ন মানে ১ লাখ কোটি)। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাপলের বাজারমূল্য হচ্ছে ৮৭৬ বিলিয়ন ডলার। আর গুগলের পেরেন্ট কোম্পানি অ্যালফ্যাবেটের বাজারমূল্য ৭৫৫ বিলিয়ন ডলার।
১৯৩৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে একদল আমেরিকান জিওলজিস্ট এসে নেমেছিল সৌদি আরবের পারস্য উপসাগর তীরের বন্দর জুবেইলে। সেখান থেকে মরুভূমির ভেতর দিয়ে শুরু হলো তাদের যাত্রা। সে বছরের জুলাই মাসেই ঘাওয়ার তেল ক্ষেত্র আবিষ্কারের পর সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ মার্কিন কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েল’কে সৌদি আরবে তেল অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়েছেন। তার সূত্র ধরেই এই বিজ্ঞানীদের সৌদি আরবে আসা। এরপর বাকিটা ইতিহাস।
সৌদি আরব সরকার আর মার্কিন কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মধ্যে এই চুক্তির পথ ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যারাবিয়ান আমেরিকান অয়েল কোম্পানি (আরামকো)। সৌদি সরকারকে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড ছাড়াও আয় অনুযায়ী অর্থ দেয়ার অঙ্গীকার করে আরামকো। আরামকো সৌদি আরবের কিছু এলাকায় তেল অনুসন্ধানের একচেটিয়া অনুমতি পায়। আরামকোর প্রকৌশলীরা জানতেন, সৌদি আরবে তেল আছে। কিন্তু কোথায়, সেটাই ছিল প্রশ্ন। ১৯৩৮ সালে দাহরানের কাছে দাম্মাম তেল ক্ষেত্র আবিষ্কার করল তারা।
১৯৫০ সালে সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ আরামকো জাতীয়করণের হুমকি দিলে আরামকো তাদের লভ্যাংশ সৌদি সরকারের সঙ্গে ভাগ করতে রাজী হয়।
১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নেয়ার পর সৌদি আরব সরকার আরামকোর ২৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে নেয়। ১৯৭৪ সাল নাগাদ সৌদি সরকারের মালিকানা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ শতাংশ। আশির দশক নাগাদ পুরো কোম্পানিকেই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ে আসে সৌদি সরকার।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি অর্থনীতিতে সংস্কারের লক্ষ্যে ‘ভিশন-২০৩০’ বলে যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, এটি তারই অংশ। তিনি তেলের ওপর সৌদি অর্থনীতির নির্ভরতা কমাতে চান। অর্থনীতির বিভিন্ন খাত বাইরের বিনিয়োগের জন্য খুলে দিতে চান। সেই সঙ্গে ২০১৪ সাল হতে সৌদি সরকার যে বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি, সেটি কমিয়ে আনতে চান।
সৌদি আরামকোর শেয়ার বিক্রি থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা জমা হবে সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা পিআইএফে। এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে নানা ধরনের প্রকল্পে। সৌদি আরামকোর বাকি ৯৫ শতাংশ মালিকানাও চলে যাবে এই তহবিলের কাছে।
সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা লন্ডন, নিউইয়র্ক, টোকিও এবং হংকং – এসব শেয়ারবাজারই তাদের বিবেচনায় রেখেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button