বুখারী শরীফ হিফজ করে হাবিবুল্লাহ সিরাজীর বিরল কৃতিত্ব
সরকার আদম আলী: পবিত্র কোরআন হেফজ করা ইসলামের প্রারম্ভিকতা থেকে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় রয়েছে লাখ লাখ কোরআনের হাফেজ। হাদিস শরীফও সাহাবীদের মুখস্থ ছিল। এসব হাদিস সাহাবায়ে কেরাম নবীজী (সাঃ)-এর মুখ থেকে শুনে লিখে ও মুখস্থ রেখেছিলেন। যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঈমামগণ সংগ্রহ করে বাছাই করে পুস্তকাকারে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের পরে একসঙ্গে শত শত হাদিস কেউ মুখস্থ করেছে এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম। বাংলাদেশে বুখারী শরীফের হাফেজ আছে বলে জানা যায়নি। কিন্তু এই বিরল কাজটি করেছেন হাফেজ হাবিবুল্লাহ সিরাজী নামে নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসার একজন প্রাক্তন ছাত্র। তিনি সহীহুল বুখারীর ৭ হাজার ২শ’ ৭৫টি হাদিস (তাকরার ছাড়া) হেফজ করার গৌরব অর্জন করেছেন। তিনি সিরাজগঞ্জের ইসলামনগর পাইকশা গ্রামের মাওলানা ইসমাইল সিরাজী ও আমেনা বিনতে আবি সাইদের পুত্র।
এই ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনাটির প্রেক্ষাপট হচ্ছে নবীজী (সা)’র হাদিস রয়েছে যে, ‘তোমরা হাদিস মুখস্থ কর এবং হাদিস প্রচার কর’। এক্ষেত্রে জামেয়া কাসেমিয়া কামেল মাদরাসার আরবী সাহিত্যের শিক্ষক মাওলানা রফিউদ্দিন ও মাওলানা খোরশেদ আলম ঘোষণা করেন যে, যে ব্যক্তি ১ হাজার হাদিস মুখস্থ করতে পারবে তাকে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। এ ঘোষণা রুনে হাফেজ হাবিবুল্লাহ সিরাজী প্রথম ১ হাজার হাদীস মুখস্থ করে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার লাভ করেন। পরে ঘোষণা করা হয় যে, রিয়াদুস সালেহীন নামে একটি বইয়ে ১৯শ’ হাদিস রয়েছে। যে ব্যক্তি এই ১৯শ’ হাদিস মুখস্থ করতে পারবে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। এই ঘোষণার পর হাফেজ হাবিবুল্লাহ সিরাজী রিয়াদুস সালেহীনের ১৯শ’ হাদিস মুখস্থ করে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার লাভ করেন। হাফেজ সিরাজীকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করেন নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনজুর এলাহী। পুরস্কার প্রদানের দিন উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি পুরো সহীহুল বুখারী মুখস্থ করতে পারবে তাকে ১ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। এই ঘোষণার পর হাফেজ হাবিবুল্লাহ সিরাজী বুখারী শরীফের ৭ হাজার ২শ’ ৭৫টি হাদিস মুখস্থ করার গৌরব অর্জন করেন। গত বুধবার রাতে জামেয়া কাসেমিয়া মাদরাসার ৪২তম বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনজুর এলাহী, হাফেজ হাবিবুল্লাহ সিরাজীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জামেয়া কাসেমিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, বর্তমান মহা-পরিচালক এবং বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান আল্লামা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী, আব্দুল কাদির মোল্লা, সিটি কলেজের প্রিন্সিপাল ড. মশিউর রহমান মৃধা এবং মাদরাসার অন্য শিক্ষকবৃন্দ।
এ ব্যাপারে হাফেজ হাবিবুল্লাহ সিরাজী জানিয়েছেন, তিনি ২০০২ সালে পবিত্র কোরআন হেফজ করেছেন। সহীহুল বুখারী মুখস্থ করেছেন মাত্র ৪২ দিনে। রিয়াদুস সালেহীন মুখস্থ করেছেন ২৯ দিনে, বুলূগুল মারাম মিন আদিল্লাতিল আহকাম মুখস্থ করেছে ২৫ দিনে। ২৪ বছর বয়সের এই হাফেজ হাবিবুল্লাহ সিরাজী বর্তমানে আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে মাষ্টার্সে অধ্যয়নরত রয়েছেন।