বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শতভাগ মালিকানা দেবে কাতার
বিদেশী বিনিয়োগ সংক্রান্ত নতুন একটি আইন অনুমোদন করেছে কাতার। এ আইন অনুযায়ী অর্থনীতির অধিকাংশ খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগ মালিকানার সুযোগ পাবেন বিদেশিরা। আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত মালিকানা পেতেন।
জ্বালানি খাতের বাইরেও অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে আগ্রহী দোহা। আর সে লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কাতারের অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ আহমেদ বিন জসিম। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও গতিশীল করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক সূচকে কাতারের অবস্থান আরও সংহত হবে।
আবাসনের মতো সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য শতভাগ মালিকানার বিষয়টি কার্যকর হবে না। সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধের পর থেকেই অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপর টিকিয়ে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে দোহা। এ নিষেধাজ্ঞায় দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি।
বিশ্বের শীর্ষ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিকারক দেশ কাতার। দেশটির মাথাপিছু আয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৬০ মার্কিন ডলার। এটি কাতারকে দুনিয়ার অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর মতে, দেশটির ক্রয়ক্ষমতা বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় বেশি। যে কোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় অর্থ জোগান দেওয়ার সামর্থ্য আছে কাতারের। সৌদী জোটের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশটি নতুন নৌপথের ব্যবস্থা করেছে; যা সৌদি আরবের সীমান্তের কাছ দিয়ে গেছে। কয়েক হাজার কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় অর্থ স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে যাতে করে লেনদেন অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়। পশ্চিমা বড় বড় জ্বালানি কোম্পানিগুলোর মনোযোগ কেড়েছে ৩০ শতাংশ এলএনজি উৎপাদনের ঘোষণা দিয়ে। কাতারের এসব পদক্ষেপের সাফল্য দেখিয়ে দিয়েছে কয়েক বছরও যদি সৌদী জোটের এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকে তাতেও দেশটি বড় ধরনের কোনও সমস্যায় পড়বে না।
কাতারের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার বলেন, আমরা যতক্ষণ গ্যাস বিক্রি করতে পারবো ততক্ষণ নির্বিঘেœ টিকে থাকতে পারবো। যদি তেল রফতানিতে বাধা আসে তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের। কিন্তু তখন পুরো দুনিয়াই সংকটে পড়বে।
এই ব্যাংকার বলেন, অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাবে। কিন্তু কাতারি জনগণ দুর্ভোগে পড়বে না। হয়তো বাড়িতে পাঁচজন গৃহকর্মীর বদলে আমাদের তিনজন রাখতে হবে।
বিকল্প রুট চালু করায় পণ্য আমদানিতে কাতারকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে না। ওমানের মতো দেশগুলোর বন্দর ব্যবহার করে নতুন পথে আমদানি অব্যাহত রেখেছে কাতার। এছাড়া বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় কোনও অর্থনৈতিক প্রকল্পও বাতিল হয়নি। লন্ডনভিত্তিক ক্যাপিটাল ইকনোমিক-এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জেসন টাবেই বলেন, কাতারের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার কোনও আশঙ্কা দেখছি না।