মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে ফিরছেন মাহাথির মোহাম্মদ

Mahathirফের রাজনীতিতে ফিরছেন কিংবদন্তি, রাজনীতিক মাহাথির মোহাম্মদ (৯২)। আগামী আগস্টে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তিনি চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের জন্য। মালয়েশিয়ার বিরোধী দলীয় জোট এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নাম ঘোষণা করেছে। বলেছে, তিনিই হবেন এ বছর জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী। এর ফলে কঠিন এক চ্যালেঞ্জে পড়বেন নাজিব মোহাম্মদ। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব মোহাম্মদের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ।
তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিত, যাকে মাহাথির মোহাম্মদের শত্রু হিসেবে দেখা হতো, তার শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির। তবে এ জন্য তার সামনে কাজ অনেক বাকি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে বিভিন্ন অভিযোগে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরেছে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে। তবে আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আগস্টের মধ্যে তাকে জাতীয় নির্বাচন দিতেই হবে, যদি কোনো অঘটন না ঘটে। সেই নির্বাচনে তার সামনে এখন সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠলেন মাহাথির মোহাম্মদ। তবে নিরপেক্ষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিজয় অর্জন করা বিরোধীদের জন্য খুবই কঠিন হবে। কারণ, নিজেদের শিবিরের মধ্যে রয়েছে বিভক্তি। তাছাড়া তাদের পক্ষে যাবে না, এমনভাবে নির্বাচনী আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিম এক সময় পরস্পরে ঘোর বিরোধী ছিলেন। শত্রুও বলা যেতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দুর্নীতি ও দেশ পরিচালনা দেখে মাহাথির সেই শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তাদের জোট চায় নির্বাচনে বিজয় অর্জন করতে। যদি সেটা করা যায় তাহলে আনোয়ার ইব্রাহিমের ক্ষমতায় ফেরা এবং পরে কোনো এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ তৈরি হবে। যদি নির্বাচনে বিরোধীরা বিজয়ী হয় তাহলে তারা সময়ক্ষেপণ না করে আনোয়ার ইব্রাহিমকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় রাজকীয় ডিক্রি আদায়ের চেষ্টা করবে। এমন ডিক্রি জারি হলে আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে কোনো বাধা থাকবে না। বিরোধী দলীয় জোটের এক সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন সেক্রেটারি জেনারেল সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ। এছাড়া নির্বাচনে বিরোধী দলীয় জোট থেকে উপপ্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী ওয়ান আজিজা ওয়ান ইসমাইল।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। এ সময়ে তিনি আজকের মালয়েশিয়াকে সাজিয়েছেন নিজের হাতে। এ জন্য তিনি ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন দেশে ও বিদেশে। তাকে তাই বলা হয় মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে জীবন্ত কিংবদন্তী। তিনি যদি এবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন তাহলে তিনিই হবেন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী একজন রাষ্ট্রপ্রধান, একজন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি কি এই ইতিহাস গড়তে পারবেন! নিরপেক্ষ জরিপ কিন্তু তা বলে না। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় বারিসান ন্যাশনাল (বিএন) জোট। ডিসেম্বরে নিরপেক্ষ জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মারদেকা সেন্টার একটি জরিপ পরিচালনা করে। তাতে দেখা যায়, বর্তমান ক্ষমতাসীন বিএন জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব নাও হতে পারে। রোববার দ্য মালয়েশিয়ান ইনসাইট রিপোর্ট করেছে, নির্বাচনে বিএন জোট তাদের পপুলার ভোট হয়তো কম পেতে পারে। কিন্তু তারা পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। মারদেকা সেন্টারের পরিচালক ইব্রাহিম সুফিয়ান বলেছেন, বিরোধী দলের ভিতরে রয়েছে বিভক্তি। এ জন্য মাহাথির নেতৃত্বাধীন জোটটি সুবিধা নাও পেতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ। এর সুফল পাবে সরকার। এর আগে বিরোধী জোটে ২০১৩ সালের নির্বাচনে ছিল দ্য প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পিএএস)। তারা এখন মাহাথির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে নেই। তাই ইব্রাহিম সুফিয়ান বলেন, এখন যেভাবে বিরোধী জোটে ভাঙন দেখা যাচ্ছে, বিভক্তি দেখা যাচ্ছে তাতে বিরোধী দলের নির্বাচনে বিজয় অর্জন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে প্রায় ২০ বছর ধরে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন আনোয়ার ইব্রাহিম ও মাহাথির মোহাম্মদ। তাদের মধ্যে রয়েছে তিক্ত বিরোধিতা। একজন আরেকজনের নাম শুনতে পারেন না। এর ওপর ভিত্তি করেই পাল্টে গেছে রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। একজন মাহাথিরে ঘোর বিরোধী ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে দেখা হতো মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে এক উদীয়মান তারকা হিসেবে। কিন্তু তাদের মধ্যকার এই বিরোধে ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে আনোয়ার ইব্রাহিমকে উপপ্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর বলাৎকার ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয় আনোয়ারের বিরুদ্ধে। তাকে জেলে পাঠানো হয়। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। এরপর বিরোধী রাজনৈতিক একটি জোটের নেতৃত্ব দেন তিনি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিস্ময়কর বিজয় পান। ওই নির্বাচনে পপুলার ভোট কম পান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। তবে তার দল পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আবারো ২০১৪ সালে বলাৎকারের অভিযোগে অভিযুক্ত করে জেলে পাঠানো হয় আনোয়ার ইব্রাহিমকে। তার বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রাজনৈতিক পদ ব্যবহারে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাকে। অযোগ্য ঘোষণা করা হয় পরবর্তী নির্বাচনে, এই নির্বাচন এ বছরেই হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার যদি রাজকীয় ঘোষণা আসে তাহলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে নাজিব রাজাকের বিরোধীরা একত্রিত করেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম ও মাহাথির মোহাম্মদকে। তারা এখন এক হয়ে জোট করেছেন। নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছেন। ওদিকে ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ’ (১এমডিবি) তহবিলের রাষ্ট্রীয় অর্থ নিজের ব্যাংক একাউন্টে স্থানান্তর সহ নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ গ্রাস করেছে প্রধানমন্ত্রী নাজিব মোহাম্মদকে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে ১এমডিবি তহবিল থেকে ৪৫০ কোটি ডলার অপব্যবহার করা হয়েছে। এ তহবিল সৃষ্টি করেছিলেন নাজিব রাজাক। তিনি এর অপব্যবহার বা এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তদন্ত শেষে তাকে দুর্নীতি থেকে রেহাই দিয়েছে মালয়েশিয়ার এটর্নি জেনারেল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button