যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে পাকিস্তান
পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আফগানিস্তানে যাতায়াতকারী ন্যাটো সামরিক সরঞ্জাম বহনকারী কন্টেইনারের টোল ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ সরকার। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, পাক সরকার ন্যাটো বহরের জন্য শতকরা ১০০ থেকে ১৫০ ভাগ ট্যাক্স বাড়াতে পারে। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় টোল ট্যাক্স বাড়াতে একটি সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মাহিদ খাকান আব্বাসির কাছে পেশ করতে যাচ্ছে। পাকিস্তান সরকার ন্যাটো সেনাদের পণ্যবাহী প্রতিটি কন্টেইনারের জন্য ২,৫০০ ডলার ট্যাক্স নেয়। কন্টেইনারবাহী ট্রাকগুলো করাচি বন্দর থেকে জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে আফগান সীমান্তের তোরখাম ও চামান ক্রসিং পর্যন্ত যায়।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের কারণে আমরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। তবে, গত ১ জানুয়ারি ট্রাম্প অত্যন্ত অবমাননাকর এক টুইটার পোস্ট দেয়ার পর ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক একেবার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ট্রাম্প ওই পোস্টে বলেছেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমেরিকা বোকার মতো পাকিস্তানকে তিন হাজার তিন শ’ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু তারা মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি; আমাদের নেতাদেরকে বোকা মনে করেছে। আমরা যেসব সন্ত্রাসীকে আফগানিস্তানে ধরার জন্য খুঁজি সে বিষয়ে পাকিস্তান সাহায্য করে না বরং তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় দেয় পাকিস্তান। আর সাহায্য দেয়া হবে না।” ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এসব বক্তব্যের পর পাকিস্তান পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ন্যাটো বাহিনীর সামরিক পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্যাক্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো বাহিনীতে বর্তমানে বেশিরভাগই মার্কিন সেনা।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা দেওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খুররাম দস্তগির খান। যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগেই পাকিস্তানে সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে। এর জবাবে মঙ্গলবার খুররাম ওই ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে ‘দ্য ডন’ পত্রিকা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১ জানুয়ারি টুইট করে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা’ অভিযোগ করে বলেন, ৩৩শ’ কোটির বেশি মার্কিন ডলার অনুদান নিয়েও ইসলামাবাদ জঙ্গি দমনে পদক্ষেপ নেয়নি।
একারণে সামরিক এবং নিরাপত্তা খাতে পাকিস্তানকে যে অনুদান বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে এসেছে তা বন্ধের ঘোষণা দেন ট্রাস্প। আর এর পরপরই ২শ’ কোটি ডলারের অনুদান আটকে দেওয়া হয়। এরই পাল্টা পদক্ষেপে মঙ্গলবার ‘ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইন ইসলামাবাদ’- এ আয়োজিত এক আলোচনাসভার ভাষণে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররাম জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এতদিন ধরে দিয়ে আসা সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ করেছে পাকিস্তান। যাবতীয় হিসাব-নিকাশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্পষ্ট করে কথাবার্তা সেরে নেওয়ার সময় হয়ে এসেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। জঙ্গিদমনে পাকিস্তানের ব্যর্থতা নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগেরও জবাব দিয়েছেন খুররাম। বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে লড়াই করেও আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জিততে পারেনি। সেই ব্যর্থতার দায় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর চাপাচ্ছে। পাক-আফগান সীমান্ত নিরাপদ করতে সহায়তা না করে যুক্তরাষ্ট্র কেবল পাকিস্তানকে দোষারোপ করতেই ব্যস্ত। আফগানিস্তানে যেসব অঞ্চল এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসেনি, জঙ্গিরা সেসব অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও খুররাম ইঙ্গিত দেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে খুররামের সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা সরকারি কিনা সে সম্পর্কে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি। ইসলামাবাদও তার মন্তব্য নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। ওদিকে, ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস পাকিস্তানের সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। দূতাবাস বলছে, দু’দেশের মধ্যে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ হওয়ার কোনো খবর তাদের কাছে নেই। দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারিভাবে আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি।’’