ইকুয়েডরের নাগরিকত্ব পেলেন অ্যাসাঞ্জ

Wikiপাঁচ বছর ধরে লন্ডনের দূতাবাসে আশ্রিত সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে নাগরিকত্ব দিয়েছে একুয়েডর। যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অ্যাসাঞ্জকে দূতাবাস থেকে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা থেকেই দক্ষিণ আমেরিকান দেশটি এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের, খবর রয়টার্সের। উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে কূটনৈতিক মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল একুয়েডর; যুক্তরাজ্য ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অ্যাসাঞ্জকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা জানা গেল।
এর আগে গত সপ্তাহে একুয়েডরের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মারিয়া ফার্নান্দো এসপিনোসা রাজধানী কুইটোতে বিদেশি সাংবাদিকদের জানান, অ্যাসাঞ্জকে অন্য কোথাও পাঠাতে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা দেশকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পেতে চাইছেন তারা; যুক্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান তিনি।
“মধ্যস্থতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি আমরা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো সমাধানেই পৌঁছানো যাবে না। যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা ছাড়াও হবে না, যারা সমাধানের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে,” বলেন তিনি।
২০১২ সালে সুইডেনে হওয়া একটি ধর্ষণের অভিযোগে যুক্তরাজ্য থেকে বহিঃসমর্পণ এড়াতে লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। একুয়েডরের তখনকার বামপন্থি প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে ‘সাংবাদিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে তার রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করেছিলেন। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী লেনিন মোরেনো অ্যাসাঞ্জকে ‘হ্যাকার’ অ্যাখ্যা দিয়ে তাকে ঘিরে উদ্ভূত উপস্থিতিকে ‘জটিল’ বলেছিলেন। কোরেয়ার দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া মোরেনো অবশ্য উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে লন্ডনের দূতাবাস থেকে বের করে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছিলেন।  সুইডেন গত বছরের মে মাসে অ্যাসাঞ্জের ওপর থেকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নিলেও ব্রিটিশ পুলিশ বলেছে, লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাস থেকে বের হলেই অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হবে।
অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা গ্রেপ্তারের পর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে, যাদের লাখ লাখ গোপন সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে দিয়ে বেকায়দায় ফেলেছিলেন তিনি। এর পাল্টায় যুক্তরাজ্য বলেছিল, দূতাবাস থেকে বের হওয়া মাত্র অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে, এটাই এ সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ। অ্যাসাঞ্জের মার্কিন আইনজীবী বেরি পোলাক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাইটসব্রিজের লাল ইটের দূতাবাসে বছর পাঁচেক ধরে আটকে থাকা অ্যাসাঞ্জ বাইরে বের হলে তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কার কথা জানান একুয়েডর পররাষ্ট্র মন্ত্রী। “তার জীবন এবং অন্যান্য পরিস্থিতি নিয়ে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে; এটা যুক্তরাজ্যের কাছ থেকেই আসছে এমনটা নয়, আসছে তৃতীয় দেশ থেকে,” বলেন তিনি। নাগরিকত্ব দেওয়ার ফলে দূতাবাস ছাড়তে অ্যাসাঞ্জের কি সুবিধা হবে এবং তিনি আটকাদেশ এড়াতে পারবেন কিনা সে প্রশ্নের জবাব দেননি এসপিনোসা। উইকিলিকস এবং এর প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে তদন্ত চললেও তার নামে কোনো অভিযোগ আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
তবে ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সহযোগিতায় ডেমোক্রেটিক পার্টি ও তার প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল হ্যাক করে সে তথ্য ফাঁস করে ট্রাম্পকে জেতাতে উইকিলিকস ভূমিকা রেখেছিল বলে অভিযোগ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। অ্যাসাঞ্জ অবশ্য বলেছেন, ইমেইলগুলোর উৎস সম্পর্কে ধারণা নেই তার।
গত বছর সিআইএ’র পরিচালক মাইক পম্পেও উইকিলিকসের কর্মকান্ডকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল গোয়েন্দা কর্মকান্ড’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এর আগে এপ্রিলে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিতে ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button