বাংলাদেশে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন
বাংলাদেশে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনে করে নতুন একটি আইন প্রবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে এখন একই পরিবার থেকে চারজন সদস্য একটানা নয় বছর কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ পাস হওয়ার পর থেকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের মেয়াদ-সম্পর্কিত ধারাটি পাঁচবার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০১৩ সালে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সন্ধ্যাকালীন বৈঠক সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তীব্র আপত্তির মুখে নতুন সংশোধিত আইনটি পাস করা হয়। বিলটি পাসের আগে বিরোধীদলীয় সদস্য ও স্বতন্ত্র সদস্যদের একাধিক জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়। বিলটি পাসের প্রতিবাদে জাতীয় পার্টির সদস্যরা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন।
এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক সংসদ সদস্য বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতকে সমূলে ধ্বংস করতে এ বিল আনা হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড পিস- এর প্রেসিডেন্ট ড. আরিফুর রহমান রেডিও তেহরানকে বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে যদি শৃংখলা আনা না যায় এবং যদি বাংলাদেশ ব্যাংক তার তদারকির কাজটি ঠিকমতো না করে তা হলে আইনের সংস্কার করেও কোনো উপকার পাওয়া যাবে না।
গত ১২ সেপ্টেম্বর সংসদের অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১৭’ উত্থাপন করে বিলটি উত্থাপনের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এর আগে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম সভায় বিলের বিপক্ষে মত দিলেও পরে ইতিবাচক রিপোর্ট দেওয়া হয়।
আইন সংশোধনের উদ্যোগের পর থেকেই এ নিয়ে আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের আপত্তি ছিল। আইনের খসড়া প্রণয়নের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এভাবে পারিবারিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে মত দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে আর্থিক খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব আপত্তি টিকল না।
গতকাল সংসদের বৈঠকে বিলটির সমালোচনা করে স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, এই বিল পাস হলে ব্যাংকিং খাতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা হবে। ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান যারা হন তারা নিজেদের স্বার্থে নামে-বেনামে ঋণ নেন। এই ঋণ এক পর্যায়ে খেলাপি হয়ে পড়ে। এই খেলাপি ঋণ আর কখনোই পরিশোধ হয় না। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের এই সংস্কৃতি বন্ধ করা সম্ভব না হলে দেশের ব্যাংকিং খাতে কখনোই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। সামনে দেশের জন্য মহা অশনিসংকেত বলে দাবি করে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, কয়েকজন লুটেরার জন্য আইন সংশোধন করা যায় না।
আইন সংশোধনের উদ্যোগের পর থেকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। বিশিষ্ট এই ব্যাংকার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ সংশোধনীর ব্যাপারে শেয়ারহোল্ডার, গ্রাহক কিংবা ব্যাংকের কর্মীদের কারও সমর্থন ছিল না। পক্ষে ছিলেন ব্যাংকের মুষ্টিমেয় কয়েকজন পরিচালক। অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে যারা এ বিষয়ে কথা বলেছেন, তাদেরও কোনো সমর্থন ছিল না। দেশব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও এ আইন পাস করার আর্থিক খাতের পরিণতি আরও খারাপ হবে বলে তিনি মনে করেন। -পার্স টুডে