একাকিত্ব ঘোচাতে নতুন মন্ত্রণালয় যুক্তরাজ্যে
যুক্তরাজ্যের মানুষের একাকিত্ব ঘোঁচাতে নতুন একটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি ট্রেসি ক্রউচকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। অল্প বয়সী এই নারী বর্তমানে দেশটির ক্রীড়া ও নাগরিক সমাজ-বিষয়ক মন্ত্রীও। এখন থেকে তিনি একই সঙ্গে উভয় দায়িত্ব পালন করবেন।
২০১৬ সালের জুনে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন শরণার্থীদের অধিকারের পক্ষে লড়াই করা সাবেক ব্রিটিশ এমপি জো কক্স। খুন হওয়ার আগে এ-সংক্রান্ত একটি কমিশনের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। নতুন এই মন্ত্রণালয় স্থাপনের মাধ্যমে নব্য নাৎসিবাদীদের হাতে খুন হওয়া জো কক্সের স্মৃতির প্রতিও শ্রদ্ধা জানালো ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটা লড়াইয়ে কীভাবে এগোবেন ক্রউচ? এখনই সেটা বলা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে একটা দিশা শুধু রয়েছে সামনে। যার ভিত্তিতে চলতি বছরের মধ্যেই সবিস্ত্মার কর্মসূচি প্রকাশ করবে সরকার। এতেই বলা হবে, নিঃসঙ্গদের পাশে দাঁড়াতে ঠিক কী কী করা হবে। এ ব্যাপারে মতামত ও পরামর্শ নেয়া হবে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, সরকারি ও ব্যবসায়িক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর।
সবাই মানছেন কাজটা সহজ হবে না। কারণ, ব্রিটিশ রেডক্রসের হিসাব বলছে, ছয় কোটি ৫৬ লাখ দেশবাসীর মধ্যে ৯০ লাখের বেশি মানুষ সব সময় কিংবা জীবনের কোনো না কোনো পর্বে একাকিত্বের যন্ত্রণা সয়েছেন বা সইছেন। প্রায় দুই লাখ প্রবীণ ব্যক্তি এক মাসের বেশি সময় ধরে কথা বলার মতো কোনো বন্ধু বা স্বজনকে পান না। ১৮-৩৪ বছর বয়সী ৮৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। সমাজসেবীদের অনেকেই মনে করেন, নিঃসঙ্গতা ক্রমেই দেশটির সমাজে ‘গোপন মহামারি’র আকার নিয়েছে। এর আগে, গত বছরের গোড়ার দিকে দাতব্য সংস্থা এজ ইউকে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ গভীর নি:সঙ্গতায় ভুগছেন। কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াই তারা পুরো একটি সপ্তাহ কাটিয়ে দিচ্ছেন। দাতব্য সংস্থাটির গবেষণায় বহু বছর ধরে নিঃসঙ্গতা কাটানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইংল্যান্ডের ১২ লাখ বয়স্ক মানুষের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। কেননা, এটি দুরারোগ্য বা দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। নিঃসঙ্গতার ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক মানুষদের শনাক্ত করতে তাদের প্রতিবেশী ও কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি ‘পাইলট প্রোগ্রাম’ও নিয়েছে সংস্থাটি। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র কথায়, ‘বহু মানুষের কাছে একাকিত্ব আধুনিক জীবনের এক দুঃখজনক বাস্তবতা। তাদের কেউ বয়স্ক, কেউ অন্যের সেবা করে চলেছেন, কেউ বা হারিয়েছেন ভালোবাসার মানুষটিকে। ভাবনাগুলো ভাগ করে নেয়ার কেউ নেই। নেই দুটি কথা শোনার লোক।
থেরেসা মে বলেছেন, জো কক্স দেশজুড়ে নি:সঙ্গতার মাত্রার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এতে আক্রান্তদের জন্য তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন।